বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘‘আগে যখন আমরা নৌকায় অনেক দূর যেতাম, মাঝি বলত—’চুপ থাকুন, ওই গ্রাম ডাকাতদের গ্রাম।’ ঠিক সেই রকম হাসিনার আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ডাকাতদের গ্রাম। সেই সময় আমরা অনেক ভয় আর উদ্বেগ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়ে যেতাম।’’
মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাতের প্রথম প্রহরে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্রদলের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন ও জাতীয় সংগীত অনুষ্ঠান উপস্থাপন কালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা তুলে ধরেন।
রিজভী আরও বলেন, ‘‘এ মোমবাতি প্রজ্বলন হচ্ছে গণতন্ত্রের সামনে পা বাড়ানোর সূচনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণতন্ত্র ও অধিকার প্রতিষ্ঠার মিনার। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমি বায়ান্ন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সেই দিনগুলো মনে করি, যখন শান্তির সুবাতাস বইতো।’’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘‘শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘বাধা দিলে সব বন্ধ হয়ে যাবে, আমরা সবকিছু দিয়ে ছাত্রদের স্তব্ধ করে দেব।’ কিন্তু এত প্রতিকূলতার মধ্যেও ছাত্রদের গণতন্ত্রের সংগ্রাম থেমে থাকেনি, যা শেখ হাসিনা ঠেকাতে পারেননি। দীর্ঘ ৩৬ দিনের কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন আজ আমরা আলোক প্রজ্বলনের মাধ্যমে করেছি।’’
রিজভী আরও বলেন, ‘‘শেখ হাসিনার পেটুয়া বাহিনীর হাতে ছাত্রদলের কত নেতাকর্মী গুম ও খুন হয়েছেন, যারা নব্বই ও আশির দশকে দেশকে অস্থিতিশীল করেছে। ঠিক সেই মতো তারা ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানেও সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। ঐ সংগ্রাম সফল করতে আরও অনেক বাধা আসবে, কিন্তু আমরা গণতন্ত্রের মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করে সেসব বাধা অতিক্রম করব।’’
কর্মসূচিতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান বলেন, ‘‘জুলাই মাসের শুরুতেই ছাত্রদলের এই আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয়। জুলাই আন্দোলন হঠাৎ একদিনে হয়নি, বরং হাজার হাজার মানুষের ত্যাগ ও শহিদ জীবনের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে। ৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান আসাদের রক্তের দ্বারা সম্ভব হয়েছিল। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ছিল খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সফল। আজ আমরা খুনি হাসিনা মুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। শহীদ ওয়াসিম ও সাঈদের রক্ত কখনো বৃথা যাবে না।’’
তিনি আরও জানান, ‘‘বিএনপি আল্লাহর রহমতে ক্ষমতায় আসবে এবং তারেক রহমান দেশ পরিচালনা করবেন। ইনশাআল্লাহ, কিছুদিনের মধ্যেই তিনি দেশে ফিরবেন।’’
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব জানান, ‘‘জুলাই আন্দোলন শুরু করেছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা, কিন্তু পরবর্তীতে ছাত্রদল আন্দোলনের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। রাজপথে একক ছাত্র সংগঠন হিসেবে ছাত্রদল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তৃণমূল নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি হামলা ও মামলা সত্ত্বেও সকল বাধা মোকাবিলা করেছে। এই গণঅভ্যুত্থানে শতাধিক ছাত্রদলের নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন, যাদের আত্মত্যাগ আমরা কখনো ভুলবো না।’’
কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির বলেন, ‘‘গত পনেরো বছরে দেশে যে ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলসহ বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী দলবিধ অংশগ্রহণ করেছিল। এই ফ্যাসিবাদের আমলে তরুণরা বক্তব্য দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, অথচ এই তরুণরাই ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়েছে।’’
অর্থাৎ, এই কর্মসূচিতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকার বিভিন্ন মহানগর, থানা ও ইউনিটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন ও অংশগ্রহণ করেন।