ঢাকা | শুক্রবার | ১৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৩শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করলেন

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতারা শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে দেশের গঠনে ‘জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির সূচনা করেছেন। এই কর্মসূচির মাধ্যমে তারা সেদিনের স্মৃতি পুনরুজ্জীবিত করে সামগ্রিক পরিবর্তনের ডাক দিয়েছেন।

আজ ১ জুলাই দুপুরে কেন্দ্রীয় নেতারা শহীদ আবু সাঈদের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে মোনাজাত করেন এবং এরপর তাঁর বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থান শুধুমাত্র স্বৈরাচারী সরকারের পতনের আন্দোলন ছিল না, এটি ছিল একটি নতুন সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ছাত্র আন্দোলনও। তিনি আরও জানান যে, এই আন্দোলনে যারা সংহতি জানিয়েছেন তাঁদের স্পিরিট ধারণ করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই আমরা। সংবিধান সংস্কার, বিচার ব্যবস্থা আর জুলাই সনদসহ তিন দফা দাবির সফল বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এনসিপি মাঠে থাকবে।

নাহিদ ইসলাম যৌক্তিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে আবারও ছাত্র ও জনগণকে নিয়ে নতুন করে আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন। তিনি বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে কোনো রকম টালবাহানা বরদাশত হবে না এবং প্রয়োজন হলে রাজপথে ফিরে এসে চাপ সৃষ্টি করা হবে। সংস্কার সঠিকভাবে সম্পন্ন না হলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ন্যায়সঙ্গত সংস্কার ও মানুষের অধিকার অর্জন না হওয়া পর্যন্ত এনসিপি এক পা এগোতেই থাকবে।

কেন্দ্রীয় নেতারা আরও জানিয়েছেন, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এনসিপি জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংলাপের মাধ্যমে তাদের মতামত ও আশা-আকাঙ্ক্ষা জানতে চাইছে, কারণ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্ন এখনও পূর্ণাঙ্গ হয়নি।

বিকালে শহীদ আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডের স্থানসহ রংপুর নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঘুরে দেখবেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

শহীদ আবু সাঈদের স্মরণে এই পদযাত্রা ও কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক সূচনা এবং জানানো হয় যে, ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শীর্ষক এই কর্মসূচি ১ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত চলবে।

কবর জিয়ারতে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণ অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তর অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শুরু হবে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর শহীদ মিনার থেকে। এরপর বিকেল ৩টায় রংপুরের পার্ক মোড় থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে লালবাগ, শাপলা মোড়ে জাহাজ কোম্পানি মোড়, টাউন হল মাঠে পথসভা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ডিসি মোড়, ধাপ, মেডিকেল মোড় হয়ে চেকপোস্টে সমাপ্তি হবে পদযাত্রার।

জুলাই আন্দোলনের স্মরণীয় দিন ১৬ জুলাই, যখন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ছাত্ররা আন্দোলনরত অবস্থায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটেছিল। পুলিশের টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জের পর ছাত্ররা ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু শহীদ আবু সাঈদ হাতে লাঠি নিয়ে স্থিতপ্রজ্ঞতায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখনই পুলিশ তাঁর ওপর থেকে প্রায় ৫০-৬০ ফুট দূরত্ব থেকে ছররা গুলি চালায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান করলেও আবু সাঈদ সরে যাননি এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান। হাসপাতে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষনা করেন।

শহীদ আবু সাঈদের স্মরণে ও তাঁর আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি এই কর্মসূচি আগামীতেও অব্যাহত রাখার সংকল্প প্রকাশ করেছে।