ঢাকা | শনিবার | ১৯শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৪শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

কমলনগরে আশ্রয়ন প্রকল্পের সরকারি ঘর দালালের হাতে, লাখ টাকায় বিক্রির অভিযোগ

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে গৃহহীনদের জন্য নির্মিত আশ্রয়ন প্রকল্পের সরকারি ঘরগুলো এখন দালালদের নিয়ন্ত্রণে থেকে লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যেন সরকারি আশ্রয়ের ঘর বিক্রির এক মহোৎসব চলছে। প্রশাসনের পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ না থাকায়, এসব ঘর দালালদের হাত ধরে সাধারণ গৃহহীনদের পরিবর্তে সচ্ছল ব্যক্তিদের কাছে যাচ্ছে। নিজের জমি ও বাড়ি থাকলেও অনেকে ঘর বরাদ্দ নিয়েই তা সস্তায় অন্যদের কাছে বিক্রি করছেন। এমনকি কিছু ঘর বিক্রি হয়ে আবার একাধিকবার বিক্রির পর ভাড়া দিয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে।

সম্প্রতি উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ডাক্তারপাড়া আশ্রয়ন প্রকল্পের নির্মিত ঘরগুলো ঘুরে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এসব অবস্থা জানা গেছে। ডাক্তারপাড়া আশ্রয়ন প্রকল্পটি এক জন চিহ্নিত দালালের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যার কাছে এখনও প্রায় ১০টি ঘর তালাবদ্ধ রয়েছে। এই ঘরগুলো রোজ-সোজা তালাবদ্ধ রাখা হয় এবং প্রয়োজনের সময় দাম চেয়ে বিক্রি করা হয়। মনে হয় এসব ঘরের নির্মাতা দালালই।

উপাত্ত জানায়, ডাক্তারপাড়া আশ্রয়ন প্রকল্পের মোট ৮৯টি ঘরের মধ্যে অন্তত ৫০টি ঘর বিক্রি হয়ে গেছে। বেশিরভাগ ঘরে ক্রেতারা স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন, কেউ কেউ ভাড়াটিয়াদের দিয়ে ঘর ব্যবহার করাচ্ছেন। এখনও ১৫টি ঘর তালাবদ্ধ রয়েছে, যেগুলো দালালের কাছে রয়েছে। তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী একایک করে হাজার হাজার টাকায় এসব ঘর বিক্রি করা হয়। একই অবস্থা ফজুমিয়ারহাট বাজারের পাশের ভুলুয়া ব্রীজ সংলগ্ন আশ্রয়ন প্রকল্পেও লক্ষ্য করা গেছে।

উপজেলা ভূমি অফিস জানায়, গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় চরকাদিরা, হাজিরহাট, চরলরেন্স, তোরাবগঞ্জ, চরকালকিনি ও চরমার্টিন ইউনিয়নে মোট ৮২০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণের মধ্যেই ভূমি ও গৃহহীনদের আবেদনপত্র আহ্বান ও যাচাই বাছাই করে ধাপে ধাপে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়।

তবে তদন্তে দেখা গেছে, নিজের জমি ও বাড়ি থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ অনৈতিকভাবে ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন। আবার প্রকৃত গৃহহীনরা ঘর না পেয়ে আহত হচ্ছেন। এসব সচ্ছল ব্যক্তি ঘর পেয়ে তা বাসযোগ্য না রেখে দালাল হাতের মাধ্যমে স্ট্যাম্প নিয়ে লাখ টাকা পর্যন্ত দাম দিয়ে বিক্রি করছেন। গৃহহীনরা যথাযথ যাচাই বাছাই ও সরকারি সাহায্য না পেয়ে ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় এসব ঘর কিনে বা মাসিক ভাড়ায় বসবাস করছেন।

ডাক্তারপাড়া আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দারা নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, এখানকার প্রায় ৫০টি ঘর বিক্রি হয়ে গেছে, কিন্তু অভিযোগ রয়েছে দালালরা এখনও ১০টি ঘর তালাবদ্ধ অবস্থায় রেখে বিক্রির জন্য অপেক্ষা করছে। প্রকৃত গৃহহীনরা সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কারণ প্রশাসনের পর্যাপ্ত তদারকি নেই।

কমলনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পরিতোষ কুমার বিশ্বাস বলেন, ঘর নির্মাণ ও বরাদ্দের দায়িত্ব তাদের। তবে তালিকা যাচাই বাছাই সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং ইউএনও দপ্তর থেকে করা হয়ে থাকে, যারা বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন। উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মুহাম্মদ আরাফাত হোসেন বলেন, সরেজমিনে গিয়ে সত্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে কথা বলেছেন। এছাড়া কমলনগর ইউএনও রাহাত উজ-জামানও বিভিন্ন মাধ্যমে এসব অভিযোগ শুনেছেন এবং পরিদর্শন করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

সরকারি কর্মকর্তা ও প্রশাসনিক তদারকির ঘাটতির কারণে কমলনগরে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বিক্রি ও অনৈতিক লেনদেনের প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে, যা গৃহহীনদের জীবনমান উন্নয়নে বড় বাধা সৃষ্টি করছে। প্রশাসনের তৎপরতা ছাড়া এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে প্রকৃত গৃহহীনরা সরকারের আশ্রয় থেকে বঞ্চিত হতে থাকবে।