জামালপুরের সরিষাবাড়ীর রাশেদুল ইসলাম রঞ্জু প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হাঁস, দেশি মুরগি, রাঁজহাস, টাইগার মুরগি, তিতির, কোয়েল পাখি, টার্কি, মিশরী ফাউমি এবং সোনালি মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তার এই উদ্যোগে অনেকে বেকার নারী ও পুরুষ হাঁস-মুরগির খামার গড়ে তুলেছেন এবং জীবিকার জন্য নতুন পথ তৈরি করেছেন।
সরঞ্জাম সম্পন্ন তার হ্যাচারি পোগলদিঘা ইউনিয়নের বয়ড়া বাজার এলাকায় অবস্থিত। এখানে টিনের ঘরে বৈজ্ঞানিক ইনকিউবেটর মেশিনে ডিমগুলো প্রাকৃতিক তাপ দিয়ে বাচ্চা ফোটানো হয়। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকেই তাদের ডিম নিয়ে আসেন বাচ্চা ফোটানোর জন্য। প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও শুক্রবার ক্রেতারা বাচ্চা নিতে হ্যাচারিতে ভিড় জমান। মাত্র ৫ টাকায় একজন ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে পারেন, আর চাইলে এক দিন বয়সের হাঁস বা মুরগির বাচ্চাও কিনতে পারেন যার দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত।
রঞ্জু বলছেন, ‘‘আমার হ্যাচারি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ডিম থেকে বাচ্চা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে আমরা স্থানীয় পর্যায়ে বিক্রি করি। মাঠ পর্যায়ে পাইকারি এবং খুচরা ক্রেতারা আমার কাছ থেকে বাচ্চা নিয়ে দেশের নানা অঞ্চলে সরবরাহ করেন।’’
খামারি রনি আহমেদ জানান, ‘‘রঞ্জুর হ্যাচারি থেকে প্রথম ২০টি মিসরী ফাউমি মুরগির বাচ্চা কিনে পালন শুরু করি। এখন ব্যবসা সফল হচ্ছে এবং নিয়মিত ডিম বিক্রি থেকে আয়ের সুযোগ পাচ্ছি।’’
অন্যদিকে, বয়ড়া কুলঘাট এলাকার কবির মাহমুদ বলেন, ‘‘প্রথমে টিনের দোকান করতাম। এখন বাচ্চা কিনে পালন করছি, যা থেকে ভালো লাভ হচ্ছে।’’
এছাড়া, হাঁস-মুরগির ডিম সংগ্রহ ও বাচ্চা ফোটানো কাজে অংশগ্রহণকারী আব্দুল মান্নান, রহিমা বেগম ও মারিয়া আক্তার বলেন, ‘‘আমরা বাড়ি থেকে ডিম সংগ্রহ করে মণ্ডল হ্যাচারিতে নিয়ে আসি। এতে খরচ কম পড়ে এবং ঝামেলা ছাড়াই বাচ্চা পাওয়া যায়, যা আগে ছিল না।’’
উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুর রহমান এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ‘‘রঞ্জুর এই উদ্যোগ এলাকার বেকার যুবক ও নারীদের স্বাবলম্বী করায় অনেক সাহায্য করছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে ভ্যাকসিনসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।’’
রাশেদুল ইসলাম রঞ্জুর এই উদ্যোগ শুধু তার ব্যক্তিগত লাভ নয়, বরং পুরো সরিষাবাড়ীর খামারি ও গ্রামের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।