দুপুর সোয়া ১টায় স্কুল ছুটি হয়ে যাওয়ার পর দোতলা ভবনে কোচিং ক্লাসে মগ্ন হয়ে বসেছিল
শিক্ষার্থীরা। তখন হঠাৎ করে কেঁপে ওঠে স্কুলভবন। মধ্যদুপুরের নীরবতা ভেঙে সবাইকে
স্তব্ধ করে দেয় বিকট শব্দ। ছত্রখান হয়ে যায় সবকিছু।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা বলেন, ভবনটিতে ছুটির পর দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির
শিক্ষার্থীরা কোচিং করত।
সোমবার (২১ জুলাই) রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর
একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে এখন পর্যন্ত পাইলটসহ ২০ জন নিহত হয়েছেন। আহত
হয়েছেন ১৭১ জন। হতাহতের একটি বড় অংশই স্কুলের শিক্ষার্থী, যাদের বয়স চার থেকে
আঠারো।
আহতদের স্বজনরা বলেন, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ভবনটিতে দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির
ক্লাস পরিচালনা করা হতো। স্কুল ছুটি হওয়ার পর বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে—তখন কোচিং
ক্লাস চলছিল।
পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া সন্তানের খোঁজ নিতে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে আসেন শাহেদা বেগম
(৪০)। এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের স্কুলে কোচিংয়ের ক্লাস চলছিল! আজ
কোচিং ক্লাস না করলে আমার মনি সুস্থ থাকতো।’
তিনি বলেন, ‘আমি কিছুই চাই না, আমার ছেলের সুস্থতা চাই।’
সায়েম নামে সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর সহোদর বলেন, ‘আমার ভাইয়ের শরীরে কিছু নাই,
তার শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। সে কোচিং ক্লাস করছিল, তখনই বিমানটি বিধ্বস্ত
হয়েছে।
বার্ন ইনস্টিটিউটে ইফতিসার হোসেন ইফতি নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমার ভাই
অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। তাদের স্কুল ছুটি দেওয়ার পর আমার ভাই কোচিং না করেই বেরিয়ে
গিয়েছিল। সে সুস্থ আছে। কিন্তু তার বন্ধু আগুনে পুরোপুরি পুড়ে গেছে। এমন হতাহতের
সংখ্যা বহু!’
পড়ুন: উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত: বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৭০, স্বজনদের ভিড়
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল সংবাদমাধ্যমকে বলেন,
‘বিমানটি একটি ভবনের গেইটে আছড়েপড়ে। সেটি অ্যাকাডেমিক ভবন। সেখানে স্কুলের
বাচ্চাদের ক্লাস চলছিল। একের পর এক আহতদের বের করে নিয়ে আসা হচ্ছে।’
আন্তঃবাহিনীর জনসংযোগ দপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, বিমান বাহিনীর ‘এফ-৭ বিজেআই’
প্রশিক্ষণ বিমানটি সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়নের পরপরই বিধ্বস্ত হয়।
আইএসপিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৯ জন নিহত এবং ১৬৪
জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
যখন এই বিপর্যয় নেমে আসে, এইসএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহিন ছিলেন উত্তরা
মাইলস্টোন কলেজের আটতলা ভবনের সাততলায়। ১৯ বছর বয়সী এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘তখন সবে
আমাদের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আমরা বিকট শব্দ শুনতে পাই, কলেজভবন কেঁপে ওঠে। পরে
সিঁড়ি বেয়ে নেমে এসে উদ্ধার অভিযানে যোগ দিই।’
পড়ুন: উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় পাইলটসহ নিহত ১৯, আহত ১৬৪: আইএসপিআর
‘সর্বত্র তাপ ও ঘন ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। কিছু শিশুকে দেখলাম স্কুল থেকে বেরিয়ে আসছে।
কেউ কেউ মারাত্মকভাবে দগ্ধ। আমরা যতটা পেরেছি, সহায়তা করেছি,’ বলেন এই শিক্ষার্থী।
কিন্তু অতিরিক্ত তাপ ও অবসাদের কারণে মাহিন নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার জন্য
তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।