ঢাকা | সোমবার | ২৮শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩রা সফর, ১৪৪৭ হিজরি

সাতক্ষীরার সফটশেল কাঁকড়া বিশ্ববাজারে দারুণ সাড়া ফেলেছে

সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার নরম খোসার সফটশেল কাঁকড়া আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টির মাধ্যমে এলাকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে সফটশেল কাঁকড়ার দাম ও চাহিদা বৃদ্ধির কারণে এই অঞ্চলে হাজার হাজার নতুন কাঁকড়া খামার গড়ে উঠেছে, যা জাতীয় তথা স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সর্বশেষ প্রতিবেদনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত সাতক্ষীরা থেকে ১৩.৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাঁকড়া রপ্তানি হয়েছে। গত বছর একই সময়ে রপ্তানি ছিল ৯.২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা নির্দেশ করে ৪৮.৭০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। শুধু চলতি বছরের জুন মাসেই ১.৫৭ মিলিয়ন ডলার মূল্যের কাঁকড়া রপ্তানি হয়।

বাংলাদেশের বাজারে বাণিজ্যিকভাবে অধিকাংশ সফটশেল কাঁকড়ার মধ্যে শিলা কাঁকড়া বিশেষ স্থান দখল করেছে। শিলা কাঁকড়ার খোলস পাল্টানোর সময় প্রায় ৩ ঘণ্টা নরম আবরণে ঢাকা থাকে, তখন সেটি আন্তর্জাতিক বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়। এর ফলে অনেক চাষি চিংড়ি চাষ থেকে সফটশেল কাঁকড়ার চাষে ঝুঁকছেন কারণ লাভ বেশি।

সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, সদর ও কালিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সফটশেল কাঁকড়া চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে। পুকুরের পানির উপরিস্তর ব্যবহার করে খাঁচা পদ্ধতিতে চাষ হওয়া কাঁকড়ার সঙ্গে একই পানিতে সাদা মাছ যেমন রুই, কাতলা ও তেলাপিয়া চাষ করে চাষিরা দ্বিগুণ লাভ করছেন।

সফটশেল কাঁকড়া দ্রুত প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং রান্নার জন্য আদর্শ হওয়ায় এর আন্তর্জাতিক চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনামসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কাঁকড়া রপ্তানি হচ্ছে।

এই উদ্যোগ শুধু আয়ের উৎসই নয়, বেকারত্ব দূর করার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখছে। নারী-পুরুষ উভয়েই কাঁকড়া খামারে কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জি এম সেলিম জানান, চাষিদের আধুনিক ও টেকসই চাষ পদ্ধতি শেখানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। যদিও সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণে পোনা সংগ্রহে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

শ্যামনগরের দুগাবাঁটি এলাকার কাঁকড়া চাষি গৌতম সরকার বলেছেন, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে চিংড়ির ক্ষতির মুখোমুখি হয়ে তিনি সফটশেল কাঁকড়া চাষ শুরু করেছেন, যা তার জন্য লাভজনক প্রমাণিত হয়েছে। অন্য চাষি সৌরভ সরকার জানান, তার ৭০০ খাঁচার খরচ তিন লাখ টাকা হলেও বাজারদর ভালো থাকলে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা আয় করতে পারেন। বর্তমানে ‘এ’ গ্রেড সফটশেল কাঁকড়া প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা, ‘বি’ গ্রেড ৬৫০ টাকা এবং ‘সি’ গ্রেড বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়।

খুলনা মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই অর্থবছরে সফটশেল কাঁকড়া রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি হয়েছে। ২০২৩-২৪ সালে ৬৪৪.৭৬৮ মেট্রিক টন কাঁকড়া রপ্তানি হয়েছে যার মূল্য ছিল ৮.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৪-২৫ সালে রপ্তানি পরিমাণ বেড়ে ১১৬৬.৮৮৮ মেট্রিক টনে দাঁড়ায়, যার বাজার মূল্য হয়েছে ১৪.২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ফলে এক বছরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৬.১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

সফটশেল কাঁকড়া সাতক্ষীরা জেলার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও দেশের মৎস্য ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচনে আশাব্যঞ্জক ভূমিকা পালন করছে।