ঢাকা | সোমবার | ২৮শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩রা সফর, ১৪৪৭ হিজরি

এয়ার ইন্ডিয়ায় নিরাপত্তা সংকট, ‘শনির দশা’ চলছেই

টানা যান্ত্রিক ত্রুটি ও দুর্ঘটনার ধাক্কায় যেন ‘শনির দশা’ পার করছে এয়ার ইন্ডিয়া। মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সংস্থাটির তিনটি বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি ঘটেছে, যা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলেছে।

সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে গত মঙ্গলবার, যখন হংকং থেকে দিল্লি যাওয়ার পথে ফ্লাইট এআই-৩১৫-এর অক্সিলারি পাওয়ার ইউনিটে (এপিইউ) আগুন লেগে যায়। বিমানের অবতরণের পর যাত্রী নামানোর সময় এপিইউয়ে আগুন দেখা দেয়, তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। প্রতিষ্ঠানের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যান্ত্রিক ত্রুটি সনাক্ত হওয়ায় এপিইউ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং যাত্রীরা নিরাপদে বেরিয়ে আসেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও এয়ারবাস এ৩২১ মডেলের বিমানটি আংশিকরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনার তদন্তের জন্য বিমানটিকে গ্রাউন্ড করা হয়েছে এবং বিষয়টি ডিরেক্টর জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)-কে জানান হয়েছে।

এর আগে একই সপ্তাহের সোমবার, কোচি থেকে মুম্বইগামী একটি ফ্লাইট অবতরণের সময় রানওয়ে থেকে খানিকটা সরে যায়, যার ফলে বিমানের ইঞ্জিন কাভার ও রানওয়ের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একই দিনে দিল্লি থেকে কলকাতাগামী আরেকটি ফ্লাইট টেক-অফের ঠিক আগে, ১৫৫ কিলোমিটার গতি বজায় রেখে, উড্ডয়ন স্থগিত করে।

শুধু গত মাসেই নয়, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বহুবার যান্ত্রিক ত্রুটির মুখোমুখি হয়েছে সংস্থাটি। সেই সঙ্গে ১২ জুন একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যখন আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাওয়া ফ্লাইট এআই-১৭১ উড্ডয়নের মাত্র ৩২ সেকেন্ডের মধ্যে ভেঙে পড়ে। ওই ঘটনার তীব্রতায় ২৭৪ জন প্রাণ হারান, যার মধ্যে ১৯ জন ঘটনাস্থলের কাছাকাছি অবস্থিত একটি ছাত্রাবাসে ছিলেন। একমাত্র একজন যাত্রী অলৌকিকভাবে বেঁচে যান।

দুর্ঘটনার তদন্তে নিয়োজিত এয়ারক্র্যাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএইবি) জানায়, ফ্লাইটের জ্বালানি সরবরাহ সুইচ ‘রান’ থেকে ‘কাটঅফ’ অবস্থায় চলে যাওয়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে, যা স্বাভাবিক নিয়মে কখনো হওয়া সম্ভব নয়। তাই সমগ্র ভারতে নিবন্ধিত বোয়িং বিমানগুলোর জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ সুইচ পুনরায় পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়। এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, তারা এসব পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে এবং কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি।

এদিকে ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী মুরলিধর মোহল জানিয়েছেন, চলতি ছয় মাসে এয়ার ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচটি বড় ধরনের নিরাপত্তা লঙ্ঘনের অভিযোগ এসেছে। এসব ঘটনার জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে নয়টি কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে এয়ার ইন্ডিয়ার নিরাপত্তা ও সেবা মান সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ এবং যথাযথ তদন্ত এক্ষেত্রে জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।