জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের নিরীহ আন্দোলন পরে সরকারবিরোধী সংগ্রামে পরিণত হয়েছে এবং এতে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতিরও উদ্দেশ্য ছিল বলে মন্তব্য করেছেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
রবিবার (১৩ জুলাই) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এ বক্তব্য দেন। এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, همچنین পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
উপদেষ্টা জানান, এনবিআর কর্মকর্তাদের রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন প্রথমে নিরীহ ছিলো, তবে পরবর্তী সময়ে তা সরকারবিরোধী রূপ নেয় এবং অর্থনীতিতে ক্ষতি করার উদ্দেশ্য বহন করে। আন্দোলনের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও জানান, একটি প্রতিবেদনে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে ‘আন্দোলন’ের নামে সরকারবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি হয়েছিল। সরকারের পক্ষ থেকে সংকট মোকাবিলায় অনেক ধৈর্যের পরিচয় দেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা সরকারের প্রতি প্রশ্ন তুলেছে, এতদিন আন্দোলন চলতে দিতে কেন সরকার সচেতনতা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি এবং কেন ১৫ দিনের মধ্যেই আন্দোলন থামানো হয়নি। সমস্যা সমাধানে কতবার আলোচনা হয়েছে, তবে কার্যকর ফল হয়নি বলে দুঃখ প্রকাশ করেন উপদেষ্টা।
তিনি জানান, উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি ইতোমধ্যে পাঁচটি সভা করেছে এবং ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশন, আয়কর অ্যাসোসিয়েশন, এনবিআর, সংস্কার কমিশন ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। মাঠ পর্যায়ে আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এনবিআর-এর স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে রাজস্ব নীতি ও বাস্তবায়নের দুটি বিভাগের জন্য ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা নেয়া হয়েছে। যদিও সংশ্লিষ্টরা দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন, এখন তারা দুই বিভাগ নিয়ে আপত্তি করেন না এবং সংস্কার কমিটির সিদ্ধান্তের সঙ্গেও একমত।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দুই মাসের আন্দোলনের কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং নিয়মিত শুল্ক, আয়কর ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। তবে তারা সরকারি সংস্কার কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে।
দুদকের এনবিআর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের প্রসঙ্গও উল্লেখ করে উপদেষ্টা জানিয়েছেন, কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে, যা ব্যবসায়ীরা সম্মতিবদ্ধ মনে করছে, তবে ধীরগতি অবলম্বনের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।
সরকার গত ৩০ জুন ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, বন্দর ও রাজস্ব আদায় কার্যক্রম আরও গতিশীল করার জন্য উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠন করেছে, যা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুমোদিত হয়েছে।
পাঁচ সদস্যের এই কমিটিতে নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, বাণিজ্য, বস্ত্র ও পাট এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন যোগ রয়েছেন।
উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এই কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।