পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায় লাম্পি স্কিন ডিজিস (এলএসডি) ভাইরাসের সংক্রমণে প্রায় শতাধিক গরুর মৃত্যু ঘটেছে, যার মধ্যে বাছুরের মৃত্যু সংখ্যাই বেশি। কোরবানির ঈদের আগেই এই রোগের প্রকোপ শুরু হওয়ায় স্থানীয় খামারিরা ও সাধারণ মানুষ গভীর উদ্বেগে রয়েছে।
লাম্পি স্কিন ডিজিস সাধারণত বর্ষার শেষে বা শরৎ ও বসন্তকালীন সময়েই বেশি দেখা যায়। কিন্তু এবার অনেক আগেই রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ায় সবাই চিন্তিত। আটোয়ারীর তোড়িয়া, ধামোর আলোয়াখোয়া ও বলরামপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে এই রোগে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। গত ক’দিনে তোড়িয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে ১৫টির বেশি বাছুর মারা গেছে, আর পার্শ্ববর্তী আলোয়াখোয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় আরও ১০ থেকে ১২টি বাছুরের মৃত্যু হয়েছে।
এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি জানান, তার বাছুরের জ্বর ছিল ১০৪° থেকে ১০৬° ফারেনহাইট পর্যন্ত। জ্বরের কারণে বাছুরের মুখ ও নাক থেকে লালা পড়তে থাকে, পা ফুলে যায় এবং পা ফাঁকের মধ্যে পানি জমে। পরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে কনকাল আকৃতির গুটি ওঠে যা ক্ষত ও ফোড়া গড়ে। অবশেষে বাছুরটি মারা যায়।
তবে এই সংকটময় সময়ে পল্লী পশু চিকিৎসকরা কিছু অসাধু কাজ করে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করছেন। তারা রোগীর দেখাশোনার পরিবর্তে দ্রুত বেশ কয়েকটি ইনজেকশন দিয়ে ৪০০-৫০০ টাকা ভিজিট চার্জ নিচ্ছেন এবং প্রায়ই ওষুধের নামও দেন না। এর ফলে অনেক খামারি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
আটোয়ারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. মোসা. সোয়াইবা আখতার বলেন, লাম্পি স্কিন ডিজিসে প্রধানত ১ থেকে ৬ মাস বয়সি বাছুররাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এটি ভাইরাস জনিত রোগ, তাই এর সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। সচেতনতা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে আক্রান্ত প্রাণীদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিপাইরেটিক ও অ্যান্টিহিস্টামিন প্রয়োগ করা যেতে পারে। এছাড়া ক্ষতযুক্ত স্থানে সিস্টেমিক অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা যেতে পারে।
তিনি আরও জানান, আটোয়ারী উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লাইসেন্সবিহীন এবং অদক্ষ কিছু পল্লী পশু চিকিৎসক ও ড্রাগ লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসির বিরুদ্ধেও কঠোর অভিযান নেওয়া হবে। স্থানীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগের এ উদ্যোগ এলাকাবাসীর আশা জাগাচ্ছে।