বরগুনার আমতলী উপজেলায় সরকারি বিএডিসি (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন) কর্তৃক সরবরাহিত আমন ধানের বীজ নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় একটি ডিলার মধু প্যাদা অনুমোদন ছাড়া বিপুল পরিমাণ বীজ সংগ্রহ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন, যা কৃষকদের জন্য বড় ধরনের আর্থিক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ অনুযায়ী, মধু প্যাদা বরিশালের ফরিদ মিয়া নামের ব্যক্তির কাছ থেকে গত ২৫ দিনে প্রায় ৬০ মেট্রিক টন বিআর-৪৯ ও বিআর-২৩ জাতের আমন ধানের বীজ তুলে নিয়ে তার মহিষকাটা বাজারের তিনটি গোডাউনে মজুদ করে রেখেছেন। এরপর এসব বীজ আমতলী, তালতলী, রাঙ্গাবালি ও কলাপাড়া উপজেলায় সরকারি নির্ধারিত দামের (৬৭০ টাকা) চেয়ে অনেক বেশি, অর্থাৎ ৭৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। এ কারণে কৃষকরা দীর্ঘ জ্বালা পোহাচ্ছে, পাশাপাশি সরকারি সরবরাহ ব্যবস্থাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষক নজরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘‘সরকারি বীজ না পেয়ে বাধ্য হয়ে বেশি দামে বীজ কিনতে হচ্ছে। এর কারণ নিয়মবিরোধী সিন্ডিকেট, যার অন্যতম সদস্য মধু প্যাদা।’’ আর আমতলীর আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের আফজাল হোসেন শরীফ বলেন, ‘‘১০ কেজি বিআর-৪৯ ধানের বীজ কিনেছি ৭৫০ টাকায়, যা সরকারি মূল্য থেকে অনেক বেশি।’’
অপরদিকে, উপজেলা কৃষি অফিসার রাসেল মিয়া জানিয়েছেন, ‘‘অতিরিক্ত দামে বীজ বিক্রি করা হলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে একজন ডিলারের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। অনুমোদন ছাড়া বীজ লেনদেন সম্পূর্ণ বারণ।’’
বিষয়টি নিয়ে মধু প্যাদা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘আমি সরকারি অনুমোদিত দুটি লাইসেন্সে মাত্র ৪ মেট্রিক টন বীজ পেয়েছি। অতিরিক্ত চাহিদার কারণে ফরিদ মিয়ার কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করেছি।” তবে বরিশালের ‘জননী ট্রেডার্স’ এর মালিক ফরিদ মিয়া বলেন, ‘‘ব্যবসায়িক স্বার্থের কারণে সব তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব নয়।’’
বরিশাল বিএডিসির উপপরিচালক মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করে বলেন, ‘‘ডিলাররা বাইরে থেকে বীজ কিনলে সমস্যা কী?’’
এ বছর আমতলী উপজেলায় ২৩,৫০০ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও, বিএডিসি থেকে মাত্র ৫৫ মেট্রিক টন বীজ সরবরাহ পেয়েছে কৃষকরা, যা চাহিদার তুলনায় অত্যন্ত কম। ফলে অধিকাংশ কৃষক প্রয়োজনীয় বীজ সংগ্রহে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন।
এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, ‘‘কোনো ডিলার যদি কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অতিরিক্ত দামে বীজ বিক্রি করেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
কৃষকদের দাবি, প্রশাসনের আশ্বাস সত্ত্বেও বীজের বাজারে এই সিন্ডিকেটের কুফল থেকে মুক্তি পেতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। নতুবা, কৃষকের অধিকার এবং তাদের উৎপাদনশীলতাকে নিশ্চিত করা কঠিন হবে। বর্তমানে প্রশ্ন উঠেছে, বীজের বাজারে এই দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, যা কৃষকদের কাছে সর্বোচ্চ স্বার্থ রক্ষায় অপরিহার্য।