মেহেরপুর জেলার আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের মাঝে এই মৌসুমে এক অজানা পচন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে, যা তাদের জন্য বড় আশঙ্কার সৃষ্টি করেছে। যদিও মৌসুমের শুরুতে এই রোগ লক্ষ্য করা যায়নি, তবে শেষ দিকে গাছ থেকে সংগ্রহের মাত্র ২-৩ দিনের মধ্যে আম পচে যেতে শুরু করেছে। ডাঁটার দিক থেকে শুরু হওয়া এই পচনের ফলে আম দ্রুতই খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ছে, যা চাষি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক হতাশা ও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী মেহেরপুরে ২৩৬৬ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয় এবং এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫,৫১০ মেট্রিক টন। যদি মাত্র এক হাজার মেট্রিক টন আম পচে যায়, তাহলে প্রতি মনের দাম হিসেব করলে প্রায় দেড়শ কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে। কৃষি বিভাগ এই রোগটিকে ছত্রাকজনিত ‘স্টেম-এন্ড রট’ বলে ধারণা করছে। এই ধরনের পচন আগে এ অঞ্চলে কখনো দেখা যায়নি।
আম চাষিদের কথায়, আম গাছ থেকে সংগ্রহের তিন থেকে চার দিনের মধ্যে আম পচে যেতে শুরু করেছে এবং তারা মনে করছেন এটি আবহাওয়াজনিত ভাইরাস বা ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে। বিভিন্ন বাজার ও বাড়িতে আম গ্রহণের দুই দিনের মধ্যেই পচন শুরু হওয়ায় ক্রেতারাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। গড়পাড়া এলাকার এক বাসিন্দা শিখা বেগম জানান, “বাজার থেকে হিমসাগর আম কিনেছিলাম, দু’দিনের মধ্যে সব আম পচে ডাস্টবিনে ফেলতে হয়েছে।”
জেলার গাংনী উপজেলার নিশিপুর গ্রামের আম বাগান মালিক হোসেন আলী জানাচ্ছেন, আম গাছে থাকা অবস্থায় কালো ছায়ার মতো আবরন ঝাঁপিয়ে পড়ছে এবং তারপর তা দ্রুত পচে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা ভাবছিলাম মৌসুমের শেষ সময়ে ভালো দাম পাব, কিন্তু রোগের কারণে সব আম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাগান থেকে আম হারানো ছাড়া উপায় নেই।”
আম ব্যবসায়ী সিহাবের কথায়, “আম সংগ্রহ করে বিক্রি করব কিন্তু আম দুই দিনের মধ্যে পচে যাচ্ছে, এক বিশ কেজির আমে দুই কেজি পচা আম বের হচ্ছে, যা ব্যবসায় মাত্রা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে।”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামসুল আলম জানান, আবহাওয়ার কারণে ছত্রাকবাহিত এই রোগটির প্রকোপ বাড়তে পারে। তিনি জানিয়েছেন, আম সংগ্রহের কমপক্ষে ১৫ দিন আগে ওষুধ প্রয়োগ বন্ধ করা উচিত এবং এখনও পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় মাঠ পর্যায়ে টিম পাঠানো হয়নি, তবে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, দ্রুত রোগ নির্ণয় ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে আম উৎপাদনে বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে। মাঠ পর্যায়ে নজরদারি ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যেহেতু মেহেরপুরের হিমসাগর আম বর্তমানে জিআই পণ্যের মর্যাদা পেয়েছে, তাই দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে আম রপ্তানি ও দেশীয় বাজারে অসুস্থ প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে পারে। এই সংকট মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি কার্যক্রম গ্রহণ অপরিহার্য বলে মনে করা হচ্ছে।