ঢাকা | সোমবার | ২১শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৬শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা প্রসারে বাংলাদেশ ও ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের মধ্যে এমওইউ চুক্তি

বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। শুক্রবার এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের প্রধান কার্যালয়ে।

চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের পক্ষে সভাপতি নেজমেদ্দিন বিলাল এরদোয়ান স্বাক্ষর করেন। সাংবাদিকদের জন্য পাঠানো প্রেস রিলিজে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

এমওইউ স্বাক্ষরের পূর্বে, দুই পক্ষের নেতারা আন্তরিক ও সাধারণ পরিবেশে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে তারা ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার গুরুত্ব, সাংস্কৃতিক উন্নয়ন এবং এর মাধ্যমে সমাজে ঐক্য ও সভ্যতা বৃদ্ধির নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন। পাশাপাশি দেশীয় খেলাধুলার বিশ্বব্যাপী প্রচারে পারস্পরিক সহযোগিতার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

বৈঠকে নেজমেদ্দিন বিলাল এরদোয়ান বিশেষভাবে বাংলাদেশের কাবাডি, কুস্তি, বলিখেলা ও নৌকা বাইচের মতো ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলোর সম্ভাবনা তুলে ধরে এসব খেলা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিতির জন্য তার গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর সদস্যপদ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেন।

এরদোয়ান তার তুরস্কে শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি, শিক্ষা বিনিময় কর্মসূচি এবং বিষয়ভিত্তিক প্রতিযোগিতার সুযোগ প্রদান করার প্রস্তাব দেন। তিনি তার সংস্থার একটি স্কুল বাংলাদেশে স্থাপনের আগ্রহও প্রকাশ করেন। কক্সবাজারে তার মা’র সঙ্গে সফরের স্মৃতিচারণ করে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা আয়োজনের মাধ্যমে শরণার্থীদের জীবনে সাময়িক শিথিলতা আনতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

প্রতিমাত্রা, তিনি বাংলাদেশি জনগণের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থন পুনরায় জোরদার করেন এবং ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানে তরুণ সমাজ ও সাধারণ জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রশংসা করেন। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ও জাতীয় পরিচয়ের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের নেতৃত্বে দেশটির সাংস্কৃতিক মর্যাদা ও বৈশ্বিক অবস্থান পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন।

জবাবদিহিতাসহ ভারতের সমর্থনে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে বিশ্বস্ত অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদারে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, যেখানে তুরস্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র।’’ তিনি ইতিহাসের বিভিন্ন সংকটের সময় তুরস্কের পাশে থাকার কথা স্মরণ করিয়ে দেন এবং বলেন, ‘‘এই অভ্যুত্থান বাংলাদেশের তরুণদের রাজনৈতিক সচেতনতায় বিরাট পরিবর্তন এনেছে এবং সভ্যতাগত রূপান্তর শুরু করেছে।’’

উপদেষ্টা গাজায় চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের নৈতিক ও মানবিক অবস্থানের প্রশংসা করেন এবং বিশ্বজুড়ে নিপীড়িত মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতি তাঁর সমর্থন উদযাপন করেন। এছাড়াও, তিনি একটি শক্তিশালী ও কার্যকর আন্তর্জাতিক জোট গঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পূর্ণ সমর্থন ও সক্রিয় অংশগ্রহণের আশ্বাস দেন।

বৈঠকের শেষে আসিফ মাহমুদ নেজমেদ্দিন বিলালকে ২০২৫ সালের গ্লোবাল ইয়ুথ সামিটে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানান। উভয় পক্ষ এই সফরের মাধ্যমে যুব ও ক্রীড়া খাতসহ দুই দেশের কৌশলগত অংশীদারিত্ব নতুন মাত্রায় পৌঁছাবে বলে আশা প্রকাশ করেন। এই উদ্যোগ ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ও সংস্কৃতির প্রসারে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।