ঢাকা | বুধবার | ২৩শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৮শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার প্রচারে ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের সঙ্গে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতার উন্নয়নে বড় উদ্যোগ হিসেবে বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের (ডব্লিউইইউ) মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। আজ শুক্রবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের প্রধান কার্যালয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সম্পন্ন হয়।

যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের সভাপতি নেজমেদ্দিন বিলাল এরদোয়ান নিজ নিজ পক্ষে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, স্বাক্ষরের আগে উভয় পক্ষের নেতারা আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন। এই বৈঠকে তারা সভ্যতা ও সংস্কৃতির উন্নয়নে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং দেশীয় খেলাধুলার বিশ্বব্যাপী প্রচারে পারস্পরিক সহযোগিতার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

বৈঠকে বিলাল এরদোয়ান বাংলাদেশের কাবাডি, কুস্তি, বলিখেলা ও নৌকা বাইচের মতো ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার বিশাল সম্ভাবনা তুলে ধরেন এবং এসব খেলাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রসারিত করার জন্য ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের পক্ষ থেকে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোকে তাদের সংগঠনের সদস্য করা হবে।

তিনি তুরস্কে তার বিভিন্ন শিক্ষামূলক কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি, শিক্ষা বিনিময় কর্মসূচি এবং বিষয়ভিত্তিক প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করার প্রস্তাবও দেন। একই সঙ্গে তিনি ওয়াইআরডব্লিউ’র একটি স্কুল বাংলাদেশে স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেন। তুরস্কের কক্সবাজার সফরের স্মৃতি ধরে তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ঐতিহ্যবাহী খেলা আয়োজন করে শরণার্থীদের দুঃখ লাঘব করার উদ্যোগ নিতে চায় বলে জানান।

বিলাল এরদোয়ান বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের কথা পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত গণঅভ্যুত্থানে তরুণ সমাজ ও সাধারণ মানুষের উৎসাহজনক অংশগ্রহণ প্রশংসনীয়। তিনি বলেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের নেতৃত্বে দেশটি তার সাংস্কৃতিক মর্যাদা ও বৈশ্বিক অবস্থান পুনরুদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছে।

যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশ তার বিশ্বস্ত মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, যেখানে তুরস্ক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, ইতিহাসের সংকটময় মুহূর্তেও তুরস্ক সবসময় বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের জনগণের পাশে ছিল। এই অভ্যুত্থান বাংলাদেশী তরুণদের রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়িয়েছে এবং সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের প্রেরণা যুগিয়েছে, যা তুরস্কের নিজস্ব ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবনের মতোই সার্থক।

উপদেষ্টা additionally গাজায় চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের নৈতিক অবস্থান এবং নিপীড়িত মুসলিম জনগণের প্রতি সমর্থনের প্রশংসা করেন। তিনি নিষ্ঠুর নির্যাতন বন্ধে একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক জোট গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন, যেখানে বাংলাদেশ সক্রিয় ভূমিকা রাখবে বলে আশ্বাস দেন।

এছাড়াও আসিফ মাহমুদ বাংলাদেশের কাবাডি, দাঁড়িয়াবান্ধা, বলিখেলা, কুস্তি ও নৌকা বাইচসহ ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার আন্তর্জাতিক খ্যাতি বৃদ্ধিতে ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের সহযোগিতা কামনা করেন।

বৈঠকের শেষে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বিলাল এরদোয়ানকে ২০২৫ সালের গ্লোবাল ইয়ুথ সামিটে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই সফর দুই দেশের যুব ও ক্রীড়া খাতসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও গতিশীল এবং শক্তিশালী করবে।