কমনওয়েলথ চার্টারের মূল মূল্যবোধগুলোকে দেশের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে এবং নিজেদের জীবনে তা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছেন প্রায় ১০০ জন তরুণ প্রতিনিধি। ২৩ থেকে ২৪ জুন ঢাকায় দুই দিনব্যাপী একটি কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে তারা এই সংকল্প গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় কমনওয়েলথ সচিবালয় এই কর্মশালার আয়োজন করেছিল। কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য ছিল কমনওয়েলথ চার্টারে বর্ণিত গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধ তরুণদের মধ্যে গভীরভাবে ফুটিয়ে তোলা।
মিডিয়া, সিভিল সোসাইটি, সংখ্যালঘু গোষ্ঠী এবং শিক্ষাঙ্গনসহ বিভিন্ন পেশা ও পটভূমির তরুণরা এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। ইতিমধ্যে তারা তাদের নিজ নিজ কমিউনিটিতে ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণ করে চলেছেন। কেস স্টাডি এবং দলগত আলোচনার মাধ্যমে তরুণরা শিখেছেন কীভাবে এসব মূল্যবোধ বাংলাদেশের বাস্তবতার সাথে সম্পর্কিত এবং এই মূল্যবোধগুলো ছড়িয়ে দিতে তারা কী ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে।
তাদের অঙ্গীকারের মধ্যে রয়েছে প্রথমবার ভোটারদের ভোটার হিসেবে নিবন্ধনে উৎসাহিত করা, পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠী ও নারীদের কণ্ঠস্বর শক্তিশালী করা, স্থানীয় সমস্যা সমাধানে অংশ নেওয়া এবং নীতি নির্ধারণে অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা।
ঢাকার সামাজিক উদ্যোক্তা নাফিয়া ইসলাম ফারিয়া বলেন, “আমি কখনো ভাবিনি কমনওয়েলথ চার্টারের মূল্যবোধ আমার কাজের সঙ্গে এত গভীরভাবে জড়িত হতে পারে। কর্মশালায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বুঝতে পেরেছি, আমার বিশ্বাস ও এই মূল্যবোধ একসাথে গাঁথা।” তার মতে, আজকের সময়ে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক মূল্যবোধ হলো ‘সহনশীলতা, সম্মান ও বোঝাপড়া’। তিনি আরও বলেন, “আমি বাসায় ফিরে এই মূল্যবোধ অনুসারে নিজের কাজ, অনলাইন আচরণ এবং মত প্রকাশ করব। এখান থেকেই শুরু হবে পরিবর্তন।”
কর্মশালার উদ্বোধনী বক্তৃতায় যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, “কমনওয়েলথ চার্টার বিশ্বের ৫৬টি দেশের ২.৭ বিলিয়ন মানুষের নৈতিক দিকনির্দেশনা। এই মূল্যবোধের অবমূল্যায়ন হলে দেশের জন্য তা ভয়ঙ্কর ফলাফল বয়ে আনতে পারে। তাই এই কর্মশালা সময়োপযোগী এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তরুণরা এই চার্টার জানলে তারা জাতি গঠনে আরও দক্ষ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।”
কমনওয়েলথের সহকারী সেক্রেটারি-জেনারেল অধ্যাপক লুইস ফ্রান্সেস্কি বলেছেন, “আপনারা ইতোমধ্যে চিন্তায়, উদ্যোগে ও কমিউনিটি কাজে নেতৃত্ব দেখাচ্ছেন। এখন এই মূল্যবোধগুলোকে নিজের জীবনে ও নেতৃত্বে কাজে লাগান। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আপনারা নেওয়া সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। সফলতা নিশ্চিত না হলেও হাল না ছেড়ে আগিয়ে যেতে হবে। উঠে দাঁড়ান, আওয়াজ তুলুন, নেতৃত্ব দিন, যাতে আপনি এবং আপনার দেশ গর্ব করতে পারে।”
বাংলাদেশ লিবার্টি অ্যান্ড রাইটস ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা জায়েদ একরাম বলেন, “এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ আমাকে মূল্যবোধগুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে উৎসাহিত করেছে।” তিনি জানান, তাঁর সংগঠনের তরুণদের নিয়ে তারা নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য সাংবিধানিক স্বীকৃতির কাজ করবেন।
২০১৩ সালে গৃহীত কমনওয়েলথ চার্টার রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত মূল্যবোধ এবং নীতিমালার সম্মিলিত ঘোষণা। সমস্ত সদস্য দেশের পক্ষ থেকে এই চার্টারে সম্মতি দেওয়া হয়েছে।
ঢাকায় থাকাকালীন অধ্যাপক লুইস ফ্রান্সেস্কি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, কূটনৈতিক প্রতিনিধি ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গেও বৈঠকে অংশ নেন।