গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ টঙ্গি-ঘোড়াশাল-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের কালীগঞ্জ বাইপাস মোড় এখন একটি ভয়াবহ মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এখানে কোনো ধরনের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার অভাব এবং গোলচত্বর না থাকায় প্রতিনিয়ত প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। দৈনিক হাজার হাজার যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহন এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে, যেখানে নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, সিলেট ও চট্টগ্রামগামী পরিবহনগুলোর চলাচল কালীগঞ্জ বাইপাস মোড় অতিক্রম করে থাকে। তবে উপযুক্ত অবকাঠামো ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকার কারণে দুর্ঘটনার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে তিনটি ভিন্ন দিক থেকে আসা যানবাহনের নিয়ন্ত্রণহীন গতি এবং কোনও ট্রাফিক পয়েন্ট না থাকায় পরিস্থিতির ভয়াবহতা বেড়েছে বহুগুণ।
এই বছরের ১৪ মে একটি লরির চাপায় আব্দুল হামিদ (৩৪) নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী প্রাণ হারিয়েছেন; এমন দুর্ঘটনা এখানে সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পথচারী, রিকশা ও মোটরসাইকেল চালকদের জন্য এই বাইপাস মোড় এখন এক আতঙ্কের নাম। সরেজমিন পরিস্থিতি যাচাই করলে দেখা যায়, এই মোড়ে সংকর রাস্তা, অতিরিক্ত যানবাহন চাপ, সড়কের দুপাশে অবৈধ দোকান এবং তুমলিয়া মোড়ে অবস্থিত অটোরিকশা স্ট্যান্ডের কারণে প্রায়ই ভয়াবহ যানজট তৈরি হয়। কর্মজীবী মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এ সড়ক পার হতে গিয়ে নানা বিপত্তিতে পড়ছেন।
স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব আবুল হোসেন বলেন, “প্রতিদিন দুধ নিয়ে বাজারে যাই, বাইপাস মোড় পার হতে গেলে মনে হয় কখনোই জীবিত পৌঁছাতে পারব কিনা। বেপরোয়া বাসের মতো যাদের নিয়ন্ত্রণ নেই, আর কোনও ট্রাফিক ব্যবস্থা নেই এখানে।”
কালীগঞ্জ সরকারি শ্রমিক কলেজের শিক্ষার্থী মুজাহিদ ইসলাম জানান, “এ মোড়েই আমি দুইবার দুর্ঘটনায় পড়েছি, ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছি। তবুও প্রতিদিন এই মোড়ে চলাফেরা করতে থাকি ভয়ের সঙ্গে। আমরা চাই দ্রুত এখানে একটি গোলচত্বর নির্মাণ করা হোক।”
স্থানীয়রা দীর্ঘকাল ধরেই এই মোড়ে একটি সুপরিকল্পিত গোলচত্বর নির্মাণের জোর দাবি জানাচ্ছে। তাদের ধারণা, একটি গোলচত্বর যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে ও ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তনিমা আফ্রাদ জানান, “প্রায় চার মাস আগে আমি জেলা সমন্বয় সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করেছি। সড়ক ও জনপথ বিভাগকে বিষয়টি জানানো হয়েছে এবং তারা বিষয়টি নিয়ে স্টাডি করছেন বলে জানিয়েছেন।”
তবে গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মো. শরিফুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগের সকল প্রচেষ্টায় কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।
সাধারণ মানুষের একটাই দাবি—আর কোনো প্রাণহানি বা দুর্ঘটনা ঘটার আগেই এই মোড়টিকে নিরাপদ করার জন্য দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। শুধু গোলচত্বর নয়, প্রয়োজন একটি সমন্বিত ট্র্যাফিক ব্যবস্থা, যাতে এই ব্যস্ত মহাসড়কটি দুর্ঘটনামুক্ত ও জনবান্ধব হয়ে উঠতে পারে।