ঢাকা | শনিবার | ৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৪ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

গাজায় খাদ্য সংকটে ৩৭০ ফিলিস্তিনির মৃত্যু

গাজায় চলমান তীব্র খাদ্যসংকট ও অনাহারের কারণে এখন পর্যন্ত মোট ৩৭০ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। এর মধ্যে শিশু রয়েছে ১৩১ জন। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হঠাৎ করে হামাস গাজায় হামলা চালানোর পরপরই সেখানে ইসরায়েল থেকে ব্যাপক অভিযান শুরু হয়। এই সংঘাত এখনো অব্যাহত রয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে তিনজন অনাহারজনিত কারণে প্রাণ হারিয়েছে। কিছু মেডিক্যাল সূত্রের খবর অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় কমপক্ষে ৩১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯ জন গাজা সিটিতে এবং অন্যরা ট্রান্সপোর্ট ও ত্রাণ সংগ্রহের সময় গুলির শিকার হন।

হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা একটি স্বাধীন জাতীয় প্রশাসন গঠন করছে এবং ব্যাপক যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য প্রস্তুত। এই চুক্তির আওতায় সব ইসরায়েলি বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে ইসরায়েল এসব বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করে বলছে, তাদের নির্ধারিত শর্তে যুদ্ধ এখনই শেষ হতে পারে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছে, যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার জন্য তাদের শর্তাবলী রয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের অতি-ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ পশ্চিম তীরের বেশিরভাগ অংশ সংযুক্ত করার পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেছেন, যা নেতানিয়াহুর অনুমোদন পাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছে কমপক্ষে ৬৩,৭৪৬ জন এবং আহত হয়েছে ১,৬১,২৪৫ জন। গত ৭ অক্টোবর সরাসরি হামলায় নিহত হন ১,১৩৯ জন, এবং প্রায় ২০০ জনকে বন্দি করে নেওয়া হয়।

গাজায় শিশু প্রতিবন্ধীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধের দুই বছরে প্রায় ৪০,৫০০ শিশুকে নতুন আহত ও প্রতিবন্ধী দেখা দিয়েছে, যেখানে অর্ধেকের বেশি শিশুই এখন প্রতিবন্ধী।

প্রতিবেদনটি আরও জানায়, স্থানীয়দের সরে যাওয়ার জন্য ইসরায়েলি সেনাদের দেওয়া আদেশ অনেক সময় প্রতিবন্ধী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বা শ্রবণশক্তিহীন ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছায় না, ফলে তাদের পলায়ন একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়ে। মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে এসব প্রতিবন্ধীদের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করা তেমন হয় না।

প্রতিবেদন বলছে, প্রতিবন্ধীর উপর সহায়তা ও খাদ্য, পানীয় ও পরিষ্কার জলপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ বেশ অসঙ্গতিপূর্ণ। ফলে তারা খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ও জীবন বাঁচানোর জন্য অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।

এদিকে, ইসরায়েলের দীর্ঘ প্রায় ২৩ মাসের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে দ্রুত ও কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছেন আরব আমিরাত। গ্রাম ও শহর জুড়ে হামাস নির্মূল ও সঙ্কট নিরসনের নামে নিয়মিত ভয়াবহ হামলা চালাচ্ছে দখলদার বাহিনী, যেখানে অসংখ্য সাধারণ নাগরিকের জীবন ঝুঁকিতে। ইসরায়েল ও হামাসের এই সংঘাতে এখনো প্রতিদিন মৃত্যু হচ্ছে, কোন দিন শান্তিপূর্ণ নেই।

বিশেষ করে, নেতানিয়াহুর পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজার দখল আরও কঠোরভাবে চালিয়ে যাওয়ার প্রকাশ্য ঘোষণা এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন পেলেই ইসরায়েল আরও অতি-উৎসাহিত হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা নিন্দা জানালেও, নেতানিয়াহু ও তার সরকার তাতে কর্ণপাত করছে না। কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা বলেছে, ইসরায়েলের পশ্চিম তীরের অবৈধ বসতি নির্মাণ আরও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আরও প্রবল হয়ে উঠছে।

২০১৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি চুক্তির পর থেকে, ইসরায়েল পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে প্রায় ১৬০টি নতুন বসতি গড়ে উঠেছে, যা আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ। ফিলিস্তিনিরা এসব অঞ্চল নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে দেখতে চায়। সেখানে প্রায় ৭ লাখ ইহুদি ও ৩৩ লাখ ফিলিস্তিনি বসবাস করে।

২০২০ সালে স্বাক্ষরিত আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায়, আরব দেশগুলো—যেমন অরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কো—ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। ওই চুক্তির মূল শর্ত ছিল—ইসরায়েলকে পশ্চিম তীরের কিছু অংশ ছেড়ে দিতে হবে। এখন আবার ইসরায়েল তার দখলকৃত পশ্চিম তীরের আরও বেশি অংশ ইচ্ছামতো যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।