জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে গভীর সংঘাত এবং অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে জ্যেষ্ঠ তিন নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং মহাসচিব মো. মুজিবুল হক (চুন্নু) কে সমস্ত পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে নতুন মহাসচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলন। কিন্তু ১৬ জুন দলের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই সম্মেলন স্থগিত করার তথ্য জানানো হয়। এই ব্যাপারে চেয়ারম্যান জি এম কাদের কর্তৃক প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই সম্মেলন স্থগিত করার অভিযোগ তোলেন জাপার জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার।
সম্মেলনের বিলম্ব, চেয়ারম্যানের একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, আর্থিক স্বচ্ছতার অভাবসহ নানা জটিলতায় পার্টির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বিরোধ এবং বিভক্তি গড়ে উঠেছে। এই উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে সম্মেলন স্থগিত হওয়ার পর।
গত ২৫ জুন দলের কেন্দ্রীয় দপ্তরে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় জেলা ও মহানগর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার এবং মহাসচিব মুজিবুল হকের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেন। ২৮ জুন দলের প্রেসিডিয়াম সভায় ওই তিন নেতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং চেয়ারম্যান গঠনতন্ত্রের ক্ষমতার বরাত দিয়ে তাদের অব্যাহতি দেন। এই সিদ্ধান্ত আজই কার্যকর করা হয়েছে।
অন্যদিকে, অব্যাহতির ঘোষণার কিছু আগে, জ্যেষ্ঠ দুই নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার মহাসচিব পদে শামীম হায়দার পাটোয়ারীর নিয়োগকে চরম অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক এবং দলীয় গঠনতন্ত্রের লঙ্ঘন হিসেবে কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা বলেন, এটি এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত যা পার্টির ঐতিহ্য এবং প্রতিষ্ঠিত গঠনমূলক মাধ্যমে বিরুদ্ধ এবং যা দলের অস্তিত্বকেই সংকটে ফেলছে।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে গতকাল বিকেলে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে মহাসচিব মো. মুজিবুল হককে (চুন্নু) অব্যাহতি দিয়ে শূন্য পদে শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে নিয়োগ দেওয়া হয় বলে জানানো হয়। তবে এই নিয়োগকে জ্যেষ্ঠ নেতারা অগ্রহণযোগ্য বলে দাবি করেছেন।
বিবৃতিতে তারা বলছেন, ‘‘জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সম্মতি ছাড়া কাউন্সিল ঘোষণার আগে কোনো নিয়োগ বা বহিষ্কার বৈধ নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে পার্টির গঠনমূলক গণতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙে ফেলা হচ্ছে।’’
দুজন নেতাও দলীয় শৃঙ্খলা ও গঠনমূলক নেতৃত্ব পুনঃস্থাপনের জন্য ত্যাগী ও আদর্শবান নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ তথা বিস্তৃত গঠনতন্ত্র ও আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল জীবন আয়োজনে অগ্রগতির পথ সুস্পষ্ট করার জন্য সকল পক্ষের যুক্তিসঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হচ্ছে।