ঢাকা | রবিবার | ২০শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৫শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

জাতীয় পার্টিতে তীব্র অস্থিরতা, শীর্ষ তিন নেতা পদ থেকে অব্যাহতি

জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে লুকিয়ে থাকা দ্বন্দ্ব ও অস্থিরতা নতুন মোড় নিয়েছে। দলের শীর্ষ তিন নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মো. মুজিবুল হক (চুন্নু) কে গতকাল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের দলীয় সব পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। একই সঙ্গে নতুন মহাসচিব হিসেবে প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

রাজধানীর বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ২৮ জুন হওয়ার কথা ছিল জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলন। তবে ১৬ জুন জাপা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই সম্মেলন স্থগিতের ঘোষণা দেয়। জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার অভিযোগ করেন, সম্মেলন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই একতরফাভাবে নিয়েছেন।

জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে পার্টি আয়োজনে বিলম্ব, চেয়ারম্যানের একক ক্ষমতা প্রয়োগ, আর্থিক স্বচ্ছতার অভাবসহ নানা বিতর্কের কারণে গভীর বিভাজন দেখা দেয়। এই পরিস্থিতি আরও জটিল হয় সম্মেলন স্থগিত হওয়ার পর। ২৫ জুন একটি মতবিনিময় সভায় জেলা ও মহানগর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তিন নেতার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেন। ২৮ জুন অনুষ্ঠিত প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সভায় তাদের সব পদ থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং এতে চেয়ারম্যান জি এম কাদের তার ক্ষমতার বহরে এই অব্যাহতি কার্যকর করেন।

তবে অব্যাহতির ঘোষণা আসার আগেই জাতীয় পার্টির দুই জ্যেষ্ঠ নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার মহাসচিব মো. মুজিবুল হককে বাদ দিয়ে শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে মহাসচিব পদে নিয়োগের প্রতিবাদ জানিয়ে এক বিবৃতি দেন। তারা এই সিদ্ধান্তকে চরম অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক এবং গঠনতন্ত্রের সরাসরি লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেন। দুই নেতা বলেন, এটি এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরাচারিতার প্রকাশ, যা পার্টির শৃঙ্খলা ও অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জাপার কেন্দ্রীয় দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গঠনতন্ত্র অনুসারে চেয়ারম্যানের ক্ষমতার মাধ্যমে মহাসচিব মো. মুজিবুল হককে অব্যাহতি দিয়ে শূন্য হওয়া পদে শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার যৌথ বিবৃতিতে পুনরায় বলছেন, ‘‘বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দলের বৈধ মহাসচিব মুজিবুল হককে কারণ দর্শানো ছাড়া অব্যাহতি দিয়ে একক সিদ্ধান্তে নতুন মহাসচিব নিয়োগ দেওয়া উচিত নয়। জাতীয় কাউন্সিল ঘোষণার আগে এ ধরনের পদক্ষেপ সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধ।’’ তারা আরো বলেন, ‘‘এই ধরনের সিদ্ধান্ত পার্টির গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ধ্বংস করেছে এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রকাশ যা দলের সম্মান ও ঐতিহ্যের জন্য ক্ষতিকর।’’

বিবৃতিতে তারা জাতীয় পার্টির ত্যাগী ও আদর্শবান নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে একনায়কতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান। তারা উল্লেখ করেন যে, জাতীয় পার্টিকে ব্যক্তি নয়, গঠনতন্ত্র ও আদর্শের ভিত্তিতে পরিচালিত করতে হবে। গণতন্ত্র, শৃঙ্খলা ও সম্মিলিত নেতৃত্ব ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি।

এই সংঘাত ও পদ থেকে অব্যাহতির ঘটনায় জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন এক নতুন সংকটময় অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে, যা দলটির ভবিষ্যতের ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।