জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলের শীর্ষ নেতৃত্বে গভীর অস্থিরতা চোখে পড়ছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের গতকাল তিন জ্যেষ্ঠ নেতাকে দলীয় সব পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং মহাসচিব মো. মুজিবুল হক (চুন্নু)। একই সঙ্গে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে নতুন মহাসচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।
গতকাল বিকালে এই পদক্ষেপের খবর জানানো হয়, যা পূর্বের মহাসচিব মুজিবুল হককে পদত্যাগে বাধ্য করে। পরে আরও স্থানীয় স্তরের অভিযোগ ও মতবিনিময় সভার আলোকে তিন শীর্ষ নেতাকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। জি এম কাদের এই সিদ্ধান্ত গঠনতন্ত্রের ক্ষমতায় ভ্রুক্ষেপ করেই নিয়েছেন বলে দলীয় কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন।
জাতীয় পার্টির ২৮ জুনের দশম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, যা ১৬ জুন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্থগিত ঘোষণা করা হয়। আর এই সম্মেলন স্থগিত করায় দলের দুটি শীর্ষ পক্ষের মধ্যে তীব্র বিবাদ ও দফায় দফায় অভিযোগ-প্রতিশোধ মুখর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার এই সিদ্ধান্তকে একক ও একনায়কতান্ত্রিক বলে তীব্র সমালোচনা করেছেন।
তাদের দাবি, সম্মেলনের দীর্ঘ বিলম্ব, আর্থিক স্বচ্ছতার অভাব এবং একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে দলীয় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আরও জটিল রূপ নিয়েছে। দলীয় গঠনতন্ত্রের স্বচ্ছতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার তাগিদে তারা অব্যাহতির সিদ্ধান্তকে চরম অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক উল্লেখ করেছেন।
অন্যদিকে, প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে নতুন মহাসচিব করে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্তে তারা ক্ষুব्ध এবং এই পদক্ষেপকে তারা পার্টির প্রতিষ্ঠিত নীতির বিরোধী ও ক্ষমতার অপব্যবহার বলে অভিহিত করেছেন।
জাতীয় পার্টির ত্যাগী ও আদর্শবান নেতা-কর্মীদের তারা একনায়কতান্ত্রিক ও অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে ঐকমত্যের আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মতে, জাতীয় পার্টিকে গঠনমূলক নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিচালিত করতে হবে – না যে এক ব্যক্তির ইচ্ছানুযায়ী চলার স্বৈরশাসনের অধীন।
বর্তমানে, পার্টির নেতৃত্ব ও কর্মীরা এই অবস্থার দ্রুত সমাধান এবং সম্মেলন সফলভাবে পরিচালনার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দিচ্ছেন, যেন দলীয় ঐক্য ও মান বজায় থাকে এবং জাতীয় রাজনীতিতে তাদের অবদান সুসংহত থাকে।