মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানান, এবারও জাতীয় মৎস্য পদক নীতিমালা অনুযায়ী মৎস্য খাতে অসাধারণ অবদান রাখা ১৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৭টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত করা হবে। পুরস্কার হিসেবে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান ধরে যথাক্রমে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রঞ্জ পদক প্রদান করা হবে। জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই পদকগুলি তুলে দেবেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সোমবার (২১ জুলাই) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফরিদা আখতার এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, ২২ থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত এই মৎস্য সপ্তাহটি কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সমগ্র দেশব্যাপি উদযাপিত হবে। এবারের মৎস্য সপ্তাহ ‘জুলাই গণঅভ্যুথানে শহীদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা’ শীর্ষক বিশেষ প্রতিপাদ্য নিয়ে সাজানো হয়েছে। এতে মৎস্য পদক প্রদান, সচেতনতামূলক প্রচারণা, র্যালি, আলোচনা, সেমিনার, কর্মশালা ও প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
ফরিদা আখতার বলেন, মৎস্য খাত দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে—নিরাপদ প্রোটিন সরবরাহ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানি বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে খাতটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়গুলোর আয়তন প্রায় ৩৮.৬ লক্ষ হেক্টর, বদ্ধ জলাশয়ের আয়তন ৮.৫ লক্ষ হেক্টর এবং দক্ষিণের সামুদ্রিক জলসীমা ১ লাখ ১৮ হাজার বর্গকিলোমিটার। এসব জলাশয় দেশের মৎস্য সম্পদে ভরপুর উৎস।
সরকার এসব সম্পদ সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও সফলভাবে বাস্তবায়ন করছে, যার ফলে বাংলাদেশ মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বিজ্ঞানভিত্তিক এবং পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে মৎস্য আহরণ ও চাষের পাশাপাশি বিপন্ন মাছের অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা এবং টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মৎস্য সম্পদ রক্ষা ও উন্নয়ন করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন নদ-নদী ও জলাশয়ে বর্তমানে ৬৬৯টি অভয়াশ্রম পরিচালিত হচ্ছে, যা বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।
মৎস্য খাত দেশের মোট জিডিপির ২.৫৩ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপির ২২.২৬ শতাংশ অবদান রাখে। বছরে প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। প্রায় ২ কোটির বেশি মানুষ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে মৎস্য খাতের সাথে জড়িয়ে রয়েছেন। মাছ থেকে আমিষ পাওয়ার পরিমাণ মাথাপিছু দৈনিক ৬০ গ্রাম হওয়া দরকার, যেখানে বর্তমানে ৬৭.৮০ গ্রাম মাছের প্রাপ্যতা রয়েছে; যা আরও বাড়ানো জরুরি।
তিনি জানান, সরকার সামুদ্রিক মাছ আহরণের উপর ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা (১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন) কার্যকর করেছে, যা সামুদ্রিক মাছের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সহায়ক। এ ছাড়াও মা ইলিশ এবং জাটকার মতো গুরুত্বপূর্ন প্রজাতির মাছের আহরণ নিষিদ্ধকালে প্রান্তিক জেলেদের জন্য মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় চাল প্রদান করা হচ্ছে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে মোট ১২ লাখ ৬৫ হাজার ৪৪৯টি জেলে পরিবারকে ১ লাখ ৪ হাজার ৬৬২.৬৭৫ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে পরিবারের জন্য চালের পরিমাণ আরও বাড়ানোর প্রস্তাব খাদ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এ সময়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিব মো: তোফাজ্জেল হোসেন, অতিরিক্ত সচিব মো: ইমাম উদ্দীন কবীর, সৈয়দা নওয়ারা জাহান এবং মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো: আবদুর রউফ উপস্থিত ছিলেন।
‘অভয়াশ্রম গড়ে তুলি, দেশি মাছে দেশ ভরি’ এই প্রতিপাদ্যকে ঘিরে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ আগামীকাল থেকে শুরু হবে, যা দেশের মৎস্য খাতের অবদান এবং সক্ষমতা তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন।