ঢাকা | রবিবার | ২০শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৫শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

জামায়াতের সঙ্গে জোটের কোনো সুযোগ নেই, বিএনপি এনসিপির জন্য আলোচনা চালিয়ে যাওয়া চায়

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে নির্বাচনকালীন জোট গঠনের সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, অতীতে কৌশলগত কারণে জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠিত হলেও এবার সেই প্রয়োজন দেখা যাচ্ছে না। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সঙ্গে নির্বাচনের আগে আলোচনা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন।

ইউএনবি’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচন কেন্দ্র করে নানা দাবিদাওয়া তুললেও তা তাদের বৃহত্তর কৌশলের অংশ মাত্র। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আমি আশাবাদী।’’

তিনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ আলোচনা দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেন। তার মতে, অপ্রয়োজনীয় দীর্ঘসূত্রতা নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। ‘‘আলোচনা যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে শেষ হওয়া উচিত ছিল। বৈঠক পরিচালনায় কিছু ঘাটতি রয়েছে, যা প্রক্রিয়াটিকে সময়সাপেক্ষ করেছে। আশা করি, শিগগিরই একটি সারসংক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত নিতে পারব,’’ বললেন তিনি।

সালাহউদ্দিন জানান, বিএনপি এখন মূলত সেই দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠন ও জাতীয় সরকার গঠনে মনোযোগী যারা গণতান্ত্রিক সংগ্রামে একযোগে অংশগ্রহণ করেছে। ‘‘এখন অন্য কোনো বিকল্প চিন্তা করা হচ্ছে না।’’

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত এনসিপির সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে বলেও প্রস্তাব করেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘সব গণতান্ত্রিক দলই বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করবে। বিএনপি শেষ পর্যন্ত কী পরিকল্পনা নেয় এবং কার সঙ্গে জোট গঠন করে তা সময়ই বলে দেবে।’’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রিভিউ রায়ের অপেক্ষায় আছি। আমরা আশা করি, আপিল বিভাগ ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেবে। জনগণ সরকারি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থায় নির্বাচন চায়। তবে প্রধান উপদেষ্টা নিয়ে বিতর্ক এখনও বিদ্যমান। বিকল্প নিয়ে আলোচনা চলছে, সবাই প্রস্তাব দেবে। যদি নতুন কোনো বিকল্পে সম্মত না হওয়া যায়, তবে বর্তমান কাঠামো বহাল রাখা হবে।’’

আসন্ন নির্বাচনে অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির প্রস্তাবকে তিনি অসমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক বিস্তার পিআর ব্যবস্থার জন্য উপযোগী নয়। এই পদ্ধতিতে ভোটাররা সরাসরি নির্বাচিত প্রার্থী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন, যা ভোটদানে অনীহা সৃষ্টি করে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার সম্ভাবনা বাড়ায়।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের ভোটাররা পরিচিত ও স্থানীয় প্রার্থীকে ভোট দিতে পছন্দ করে। পিআর ব্যবস্থায় এমনও হতে পারে যে, কোনো এলাকায় কোনো দল বেশি ভোট পেলেও অন্য এলাকার একজনকে নির্বাচিত করা হয়, যা জনগণের রায়কে প্রতিফলিত করে না এবং গণতন্ত্র দুর্বল করে।’’

বাংলাদেশে পিআর পদ্ধতি কার্যকরী না হওয়া কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন যে, স্থানীয় সরকারগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী নয় এবং সংসদ সদস্যরা উন্নয়ন প্রকল্পে সরাসরি যুক্ত থাকেন, ফলে সেখানে পিআর মানানো কঠিন।

তিনি একই সঙ্গে বলেন, ‘‘পিআর ব্যবস্থায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনের সুযোগ কমে যায়, যা অন্যায় ও অগণতান্ত্রিক। ছোট দলগুলো পিআর চায়, কারণ তারা কম ভোট পেলেও বেশি আসন পেতে পারে, কিন্তু এর ফলে দুর্বল জোট সরকার গড়ে ওঠে এবং শক্তিশালী নেতৃত্ব গড়ে ওঠে না।’’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বিএনপির প্রতিনিধিত্বকারী এই নেতা স্পষ্ট করে বলেন, ‘‘বিএনপি কোনো অবস্থাতেই পিআর পদ্ধতি মানবে না।’’

তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন দল বিভিন্ন দাবি তুলছে — কেউ সংস্কার চায়, কেউ বিচার ছাড়া নির্বাচন নয় বলছে, কেউ পিআর চায়। এসব বক্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতও হতে পারে। তবে আমি আশাবাদী, সংবিধান অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’’