সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ‘যুব জরিপ-২০২৫’ থেকে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তা পাবে। দেশের আটটি বিভাগের দুই হাজারের বেশি পরিবারের ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীরা অংশ নেয়া এই জরিপে তরুণরা আশাবাদী যে বিএনপি ভোটারের সংখ্যায় সব দলকে ছাড়িয়ে যাবে।
জরিপ অনুযায়ী, বিএনপি আনুমানিক ৩৮.৭৬ শতাংশ ভোট পাবে, আর জামায়াতে ইসলামী পাচ্ছে ২১.৪৫ শতাংশ ভোট। অন্যান্য ইসলামপন্থি দল, এনসিপি ও জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তা তুলনামূলক কম। যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচন অংশ নেয়, তবে তারা ১৫ শতাংশ ভোট পেত বলে ধারনা করা হচ্ছে।
পুরুষ ভোটারদের মধ্যে বিএনপির প্রতি সমর্থন নারীদের তুলনায় বেশি, যা জামায়াতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অন্যদিকে, এনসিপির প্রতি নারীদের সমর্থন পুরুষদের চেয়ে বেশিয়ে, এবং শহরাঞ্চলে দলটির জনপ্রিয়তাও গ্রামাঞ্চলের তুলনায় বেশি।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, সানেম-অ্যাকশনএইডের এই জরিপ তরুণদের রাজনৈতিক মতামত ও আকর্ষণের তাজা ছবি তুলে ধরে। দেশের তরুণদের মধ্যে ৯৩.৯৬ শতাংশ বিশ্বাস করেন আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে, তবে ৬.০৪ শতাংশ নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা হারিয়েছেন। ভোট দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ৭৬.৭৮ শতাংশ তরুণ, আর ৪.১৪ শতাংশ ভোট দিতে অনিহা প্রকাশ করেছেন।
রাজনৈতিক সচেতনতার পরিপ্রেক্ষিতে, মাত্র ২৩.৩৭ শতাংশ তরুণ নিয়মিত রাজনীতির খবর রাখেন, ৩৯.০৯ শতাংশ মাঝে মাঝে অনুসরণ করেন, এবং ৩৭.৫৪ শতাংশ একেবারেই আগ্রহী নন। নারী ভোটারদের মধ্যে ২৪.২৭ শতাংশ জাতীয় রাজনীতি নিয়ে আগ্রহী নন, পুরুষদের ক্ষেত্রে এ হার ১৬.৪৮ শতাংশ। রাজনীতিতে নিয়মিত অংশগ্রহণের অনীহাও এখান থেকে পরিস্ফুট হয়।
জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের প্রতি তরুণদের আস্থাও সীমিত; মাত্র ১১.৮২ শতাংশ মনে করেন রাজনৈতিক দলগুলো দেশের প্রকৃত সমস্যার প্রতিনিধিত্ব করে, যখন ৪৯.৪২ শতাংশ একমত নন। প্রায় অর্ধেক তরুণের ধারণা রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
রাজনৈতিক সংস্কারের সম্ভাবনা নিয়েও তরুণদের মধ্যে অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন। মাত্র ৩.৩ শতাংশ মনে করেন, সংস্কার ছাড়াই উন্নতি সম্ভব, কিন্তু ৫৬.৪ শতাংশ বিশ্বাস করেন প্রয়োজনীয় সংস্কার হলে পরিবর্তন আনয়ন সম্ভব। একাংশ ভবিষ্যতে অবনতি ও স্থিতাবস্থা প্রত্যাশা করেন।
৮২.৭ শতাংশ তরুণ রাজনীতিতে যুক্ত হতে আগ্রহী নন, মাত্র ১.৬ শতাংশ বর্তমানে সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তরুণদের প্রত্যাশা রাজনৈতিক দলগুলো যেন পৃষ্ঠপোষকতা, স্বজনপ্রীতি ও সহিংসতা নির্মূল করে, নির্বাচনী প্রক্রিয়া শক্তিশালী করে গণতান্ত্রিক প্রথা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে তারা ভবিষ্যতের জন্য উপযুক্ত মনে করেন না।
জরিপ পরিচালনা প্রতিষ্ঠান দুটির মতে, জুলাই আন্দোলনের পর তরুণরা রাজনীতি ও সামাজিক সংস্কারে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। এই জরিপ তরুণদের অবস্থান এবং সরকারের নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তরুণ ভোটারদের চাহিদা এবং প্রত্যাশাকে কাজে লাগিয়ে দেশের রাজনীতিতে আদর্শ ও সংস্কারের পথ প্রশস্ত করতে এ জরিপ নতুন আলো ফেলে।