বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের কোচ পিটার বাটলারের পরিচিত স্লোগান হলো, “যে কোনো পরিস্থিতিতে সঠিক কাজ করো, যেটি সবার জন্য ভালো।” দলের সদস্য ও কোচের কাছ থেকে বারবার শোনা যায় এই পংক্তিটি। তবে ‘সবার জন্য ভালো’ বলতে কি বোঝানো হয়, আর ‘সবাই’ মানে কারা? এই উত্তরটা জানাটা আমাদের সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বাটলারের মতে, ‘সবার’ অর্থ বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল আর ‘সবার জন্য ভালো’ মানে দলকে উন্নতির পথে এগিয়ে নেওয়া। হয়ত এই সৎ মনোভাবের কারণে তিনি বাংলাদেশের নারী ফুটবলটিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারছেন।
বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দল টানা দুটি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে। দেশের মানুষের মুখে মুখে ফুটবল দলের গুণগান চলছে। তবে কি শুধু এই দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বই যথেষ্ট? কিভাবে এশিয়ান পরিসরে আরও শক্তিশালী দলের সঙ্গে পাল্লা দিতে হবে তা মুখ্য প্রশ্ন। এ জন্য পিটার বাটলার দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ বাড়ানোর পক্ষে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো এশিয়ার বুকে নিজেদের পতাকা উড়িয়ে শিক্ষা দিল যে, তারা শুধু দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন নয়, এশিয়ায়ও দাপুটে দল হতে পারে। তারা ৩৬ ধাপ এগিয়ে থাকা বাহরাইনকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে মাঠে যাত্রা শুরু করলো, দ্বিতীয় ম্যাচে ৭৩ ধাপ এগিয়ে থাকা স্বাগতিক মিয়ানমারকে পরাজিত করে এশিয়ান কাপ খেলার যোগ্যতা নিশ্চিত করেছে। রক্ষণ, মাঝমাঠ ও আক্রমণ সব বিভাগে দল এখন প্রস্তুত, এই সাহসী বাংলাদেশকে ‘বাটলারের বাংলাদেশ’ ছাড়া আর কিছু বলা যাবে না।
গত বছর ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ থেকে বাংলাদেশে আসা কোচ পিটার বাটলার দায়িত্ব নিয়েছিলেন বাফুফের এলিট একাডেমির। পরে নারী দলের দায়িত্বও নেন। আগের সময়ে আফ্রিকার দুই দেশে কোচিং করার অভিজ্ঞতা থাকার কারণে জাতীয় দল পরিচালনা তার জন্য অন্যরকম নয়।
বাটলার স্পষ্ট করে দিয়েছেন, দলের কোথাও কোন বেসুরো স্থান নেই। যারা পুরো ৯০ মিনিট সমান ভাবে খেলতে পারেন না তাদের জন্য প্রতিষ্ঠান নেই। বিদ্রোহীদের সঙ্গে আপস করেননি, তাদের দল থেকে বের করে দিয়েছেন এবং দলের শৃঙ্খলা ও পারফরম্যান্সের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
যদিও বাটলার ব্রিটিশ কোচ, তাঁর দলে ব্রিটিশ ফুটবলের প্রচলিত ‘ডিরেক্ট স্টাইল’ নেই। তিনি উচ্চসারী ‘হাই প্রেসিং’, বল দখলের মাধ্যমে বুদ্ধিদীপ্ত বিল্ডআপ ও তীব্র ‘উইং প্লে’ চালিয়ে দলের খেলায় গতিশীলতা এনেছেন। দলের খেলোয়াড়দের ফিজিক্যাল দক্ষতা ও ট্যাকটিক্যাল উপযোগিতা আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে।
ফুটবলকে ‘থ্রি এস’ অর্থাৎ গতি (স্পিড), শক্তি (স্ট্রেংথ) ও সহনশীলতা (স্ট্যামিনা) মিলে সফলতা এনে দেয়। তরুণ খেলোয়াড়দের মধ্যে এই ‘থ্রি এস’ এখন আশাব্যঞ্জক পর্যায়ে পৌঁছেছে। উন্নতির জায়গা থাকলেও সঠিক প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা দিয়ে বিশ্বকাপের স্বপ্নও ধরা দিতে পারে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল।
লেখক: রাশেদুল ইসলাম, সাবেক ফুটবলার, জাতীয় দল