ঢাকা | বৃহস্পতিবার | ১৭ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২২শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

বাংলাদেশে ইংলিশ মাস্টারক্লাস: কোচ পিটার বাটলারের ফুটবল যাত্রা

‘যে কোনো পরিস্থিতিতে সঠিক কাজ করো, যেটি সবার জন্য ভালো।’ বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের কোচ পিটার বাটলারের কাছে এই বাক্যটাই হলো সিগনেচার ট্যাগ লাইন। দলীয় সভা কিংবা ব্যক্তিগত আলোচনায় বারবার তিনি খেলোয়াড়দের এই কথা স্মরণ করিয়ে দেন। কিন্তু ‘সবাই’ কারা? আর ‘সবার জন্য ভালো’ বলতে আসলে কী বোঝানো হয়? এই দুটি প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে পিটার বাটলার বলেন, ‘সবাই’ বলতে তিনি বুঝান বাংলাদেশ দলকেই, আর ‘সবার জন্য ভালো’ বলতে বোঝায় দেশের ফুটবল উন্নয়নের স্বার্থে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া। হয়তো এই অবস্থানকেই তিনি অস্বীকার করেননি, তাই বাটলার ও তার দলের গল্প নিয়ে লিখতে হয়।

টানা দুই সাফ টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল এখন অনেকের মুখে মুখে। কিন্তু কীভাবে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষত্বের গর্বকে ধরে রাখা যায়, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। এই লক্ষ্যেই পিটার বাটলার ইংলিশ মাস্টারক্লাস নিয়েই বাংলাদেশে আসেন এবং দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে শক্তিশালী দলগুলোর সঙ্গে বেশি ম্যাচ খেলার জন্য তৎপর হন। তার সেই পরিকল্পনা সাফল্য দেখাতে শুরু করে।

গত বুধবার সন্ধ্যায় প্রথমবার এশিয়ার মঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা উড়ল, দক্ষিণ এশিয়ার বাঁধ ভেঙে। বাটলারের বাংলাদেশ হিসেবে পরিচিত এই দলটি আগের চ্যাম্পিয়ন হলেও এখন এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে শক্তিশালী পারফরম্যান্সের মাধ্যমে নতুন দিগন্ত স্পর্শ করছে।

বাহরাইনকে বড় ব্যবধানের জয় দিয়ে শুরু, এরপর মিয়ানমারকে হারিয়ে এশিয়ান কাপ খেলবার সুযোগ নিশ্চিত করল দলটি। রক্ষণ, মিডফিল্ড ও আক্রমণ লাইন থেকে এই দল এখন পরবর্তী ধাপের জন্য প্রস্তুত। বাটলার নিজে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ সাবেক কোচ হিসেবে ২০২২ সালের শুরুতে বাংলাদেশে এসেছেন, এরপর মে মাসে নারী দলের দায়িত্ব পেয়ে কাজ শুরু করেন। অতীতে আফ্রিকা থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বাংলাদেশ দলকে পরিপূর্ণ পরিকল্পনা ও কঠোর শৃঙ্খলা দিয়ে সাজিয়েছেন।

দলে কারো জায়গা নিশ্চিত নয়, পুরো ৯০ মিনিট খেলতেই হবে সমান মানের ফুটবল—এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তিনি দলের খেলোয়াড়দের মানসিকতাও বদলে দিয়েছেন। বিদ্রোহীদের সঙ্গে আপস করেননি বরং প্রয়োজনীয় খেলোয়াড়দের দলে ফিরিয়েছেন শৃঙ্খলা ও পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে।

বাটলারের ফুটবল ধারা ব্রিটিশ ‘ডিরেক্ট স্টাইল’ থেকে পৃথক, যেখানে ‘হাই প্রেসিং’, দ্রুত বিল্ডআপ, ওয়ান টু ওয়ান চালনা ও উইং প্লে দিয়ে তারা প্রতিপক্ষকে চাপে রাখে এবং ঝড়ের মতো আক্রমণ চালায়। এর আগে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা টেকনিক্যালি ভালো হলেও এখন ট্যাকটিক্যাল ও ফিজিক্যালি আরও সমৃদ্ধ।

ফুটবলে ‘থ্রি এস’ (স্পিড, স্ট্রেংথ, স্ট্যামিনা) খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বাটলারের তরুণ দলের এই তিনটি গুণ খুব উন্নত। যদিও উন্নতির জায়গাও আছে। আশাকরি নিয়মিত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে তারা এশিয়ান মঞ্চ ছাপিয়ে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।

লেখক: রাশেদুল ইসলাম, সাবেক ফুটবলার ও জাতীয় দলের সদস্য