বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) সম্প্রতি দেশে মানবাধিকার মিশন স্থাপনের লক্ষ্যে তিন বছরের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এই মিশনের মূল উদ্দেশ্য হবে দেশের মানবাধিকার সুরক্ষা এবং উন্নয়নে কার্যকর সহায়তা প্রদান।
শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। মিশনটি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রশিক্ষণ এবং কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে, যাতে তারা মানবাধিকার রক্ষা কার্যক্রমে আরও দক্ষ ও সক্ষম হতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, এই উদ্যোগের মাধ্যমে জাতিগত ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বাধ্যবাধকতা পূরণে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে মিশনটি। দক্ষতা বৃদ্ধি, আইনগত সহায়তা এবং প্রতিষ্ঠানগত সক্ষমতা উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের মানবাধিকার প্রতিরক্ষা প্রক্রিয়া সুদৃঢ় করা হবে।
বিশেষ করে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষাপটে দেশের জবাবদিহিতা বাড়ানো এবং সংস্কার প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিক অঙ্গীকার হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে গুরুত্বের সঙ্গে জোর দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশের সমাজগঠন শক্তিশালী সংস্কৃতি ও দৃঢ় ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। তাই যেকোনো আন্তর্জাতিক অংশীদারিকে এই মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে, যা স্থানীয় নাগরিকরাও প্রত্যাশা করেন।
এদিকে, ওএইচসিএইচআর মিশন শুধুমাত্র গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিরোধ এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের ওপর গুরুত্ব দিবে, বিশেষ করে পূর্ববর্তী সরকারের সময়কার অপরাধের বিষয়ে। এই মিশন দেশের আইনি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোর বাইরেও কোনো এসা সামাজিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে না।
মিশন স্বচ্ছভাবে এবং স্থানীয় অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে সমন্বয় করেই কাজ করবে বলে সরকার আশা প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘও বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় বাস্তবতাকে সম্মান করার সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সরকার পরিষ্কার করে উল্লেখ করেছে, জাতীয় স্বার্থের সঙ্গত না হলে সার্বভৌম কর্তৃত্ব অনুযায়ী যে কোনও সময় এই চুক্তি থেকে সরে আসার অধিকার রাখে বাংলাদেশ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যদি পূর্ববর্তী সরকারের সময় এমন একটি অফিস থাকত, তাহলে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গণহত্যাসহ অনেক কঠোর অপরাধ যথাযথ তদন্ত ও বিচারের আওতায় আসত।
সবশেষে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মানবাধিকার রক্ষায় আমাদের অঙ্গীকার আদর্শের ওপর নয়, সুবিচারের ভিত্তিতেই হওয়া উচিত। বাংলাদেশ সরকার এই অংশীদারিত্বকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখছে, যা দেশের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে শক্তিশালী করে আইনের শাসন ও নাগরিক অধিকার রক্ষায় সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। এই প্রচেষ্টা দেশের মূল্যবোধ, আইন এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার ভিত্তিতে পরিচালিত হবে।