ঢাকা | রবিবার | ২০শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৫শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

রিজভীর বক্তব্য: হাসিনার আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ডাকাতের নিরাপদ আবাসস্থল

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক রুহুল কবির রিজভী মর্মস্তব্ধ করে বলা বলেছেন, ‘‘আমরা যখন আগে নৌকায় দূরবর্তী অঞ্চলে যেতাম, তখন মাঝি আমাদের বলেন—চুপ থাকুন, ওই গ্রাম ডাকাতদের গ্রাম। কিন্তু আজকের পরিস্থিতিতে বলতে বাধ্য হচ্ছি, হাসিনার আমলে এমনই ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় যেন ডাকাতদের নিরাপদ আবাসস্থল হয়ে উঠেছিল। আমরা অনেকটা আতঙ্ক নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এলাম এবং পার হলাম।’’

তিনি মঙ্গলবার (১ জুলাই) মধ্যরাতে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্রদলের আয়োজিত ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের শহীদ এবং আহতদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন ও জাতীয় সংগীতের কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা তুলে ধরেন।

রিজভী আরো বলেন, ‘‘মোমবাতি প্রজ্বলনের মাধ্যমে আমরা আগামী দিনে গণতন্ত্রের পথকে আলোকিত করার সংকল্প নিচ্ছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণতন্ত্র এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার এক গর্বিত প্রতীক। এ জায়গায় দাঁড়িয়ে আমি সেই ১৯৫২ এবং ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক সময় মনে করছি, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তির সুবাতাস বইছিল।’‘

তিনি জানান, ‘‘শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বাঁধা দিলে সব বন্ধ হয়ে যাবে, আমরা ছাত্রদের স্তব্ধ করে দেব। কিন্তু ছাত্রদের গণতন্ত্রের সংগ্রাম তাকে থামাতে পারেনি। আজ আমরা আলোক প্রজ্বলনের মাধ্যমে আমাদের দীর্ঘ ৩৬ দিনের কর্মসূচির শুভ সূচনা করলাম।’’

রিজভী আরও বলেন, ‘‘শেখ হাসিনার পেটুয়া বাহিনীর হাতে ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী গুম ও হত্যা হয়েছে। তারা নব্বই ও আশির দশকে যে অমানবিক কাণ্ড ঘটিয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে আমরা লক্ষ্য করেছি। তবে আমরা বাধা অতিক্রম করে গণতন্ত্রের মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’‘

কর্মসূচিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান বলেন, ‘‘জুলাই মাসের শুরুতে ছাত্রদলের আয়োজন সম্পর্কে তাদের ধন্যবাদ জানাই। জুলাই আন্দোলন একদিনে হয়নি; হাজার হাজার মানুষ জীবন দিয়েছিল। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান আহমদ আসাদের রক্তের বিনিময়ে সম্ভব হয়েছিল। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনও সফল হয়েছিল খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। আমরা সেই স্বপ্ন পূরণ করে আজ হত্যাকারী হাসিনামুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চাই। শহীদ ওয়াসিম, সাঈদের রক্ত কখনো বৃথা যাবে না।’‘

তিনি আরও জানান, ‘‘বিএনপি ইনশাআল্লাহ শীঘ্রই ক্ষমতায় আসবে এবং তারেক রহমান দেশ পরিচালনা করবেন। কয়েক দিনের মধ্যে তিনি দেশে ফিরবেন।’’

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘‘জুলাই আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা, আর আন্দোলনের শিবিরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ছাত্রদল। আমাদের তৃণমূল নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি হামলা এবং মামলা সইয়ে সহ্য করেছে। শতাধিক নেতাকর্মী এই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগ আমরা চিরকাল স্মরণ করব।’’

কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির বলেন, ‘‘পনেরো বছর ধরে দেশে যে ফ্যাসিবাদী শাসন বিরাজ করেছিল, তার বিরুদ্ধে ছাত্রদলসহ জাতীয়তাবাদী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। তবে এই ফ্যাসিবাদ তরুণদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করেছিল। সেই তরুণরাই এখন ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়েছে।’’

এই অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকার বিভিন্ন থানার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।