জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতাদের শহীদ আবু সাঈদের কবর জেয়ারতের মধ্য দিয়ে শুরু হলো ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি, যা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে।
আজ ১ জুলাই দুপুরে কেন্দ্রীয় নেতারা শহীদ আবু সাঈদের বাড়িতে গিয়ে তাকে স্মরণ করেন এবং মোনাজাত পরিচালনা করেন। মোনাজাতের পরে তারা শহীদ আবু সাঈদের বাবা-মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন, ‘‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল শুধুমাত্র স্বৈরাচারী সরকারের পতনের আন্দোলন নয়, এটি ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সংগ্রামও ছিল। এই আন্দোলনে যারা আমাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন, তাদের চেতনাকে ধারণ করে নতুন বাংলাদেশ গড়তে আমরা বিচার ব্যবস্থা, নতুন সংবিধান এবং জুলাই সনদসহ তিন দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকবে।’’
নাহিদ ইসলাম আরও যোগ করেন, ‘‘যৌক্তিক সংস্কারের জন্য প্রয়োজনে আমরা আবারও সংগঠিত হয়ে ছাত্র-জনতাকে নিয়ে আন্দোলনে নামবো। জুলাই সনদের ব্যাপারে কোনো টালবাহানা বরদাশত করা হবে না। প্রয়োজন পড়লে আবারো রাজপথে নেমে গণতান্ত্রিক অধিকার আদায় করব। নির্বাচনের পূর্বে প্রয়োজনীয় সংস্কার দরকার, অন্যথায় আমরা সেই নির্বাচন মেনে নেবো না।’’
দেশের অন্যান্য নেতারা যেমন সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘‘ন্যায়সঙ্গত সংস্কার এবং মানুষের অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এক ধাপও পিছিয়ে যাবো না।’’
এই কর্মসূচির মাধ্যমে এনসিপি গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংলাপের চেষ্টা করছে। কারণ, তারা মনে করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্ন এখনো অসম্পূর্ণ। এই পদযাত্রা সাধারণ মানুষের মতামত ও প্রত্যাশা জানার এক সুবর্ণ সুযোগ প্রদান করবে।
বিকেলে শহীদ আবু সাঈদের হত্যাস্থলসহ রংপুর নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পরিদর্শন করার কথা রয়েছে।
জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি ১ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত চলবে। কর্মসূচির শুরু হবে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর শহীদ মিনার থেকে। এরপর রংপুরে বিকেল ৩টায় পার্ক মোড় থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে লালবাগ, শাপলা, জাহাজ কোম্পানি মোড় হয়ে টাউন হল মাঠে পথসভায় মিলিত হবে। পরে ডিসির মোড়, ধাপ, মেডিকেল মোড় এবং চেকপোস্ট পেরিয়ে কর্মসূচির সমাপ্তি হবে।
জুলাই আন্দোলনের সময় ২০২৩ সালের ১৬ জুলাই রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ছাত্র- পুলিশ সংঘর্ষে শহীদ হন আবু সাঈদ। সে সময় ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জ করে। শিক্ষার্থীরা সরে গেলেও আবু সাঈদ একটি লাঠি হাতে নিয়ে, দু’হাত প্রসারিত অবস্থায় দৃঢ়তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন পুলিশ প্রায় ৫০-৬০ ফুট দূর থেকে ছররা গুলি প্রহার করে। সে অবস্থানে অবিচল থেকেও গুলিতে মৃতুবরণ করেন। পরে শিক্ষার্থীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
শহীদ আবু সাঈদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং তার ত্যাগের চেতনাকে সামনে রেখে এনসিপি নেতারা দেশের এগিয়ে চলার পথ সুগম করতে ‘জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি নিয়োজিত থাকতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।