প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ কিংবা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কোনো আগ্রহ বা ইচ্ছা রাখেন না। গত শুক্রবার মালয়েশিয়ায় রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা বার্নামাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান। এই সফরে তিনি মালয়েশিয়ায় গিয়ে বার্নামার সঙ্গে বিস্তারিত আলাপচারিতা করেন।
ড. ইউনূস বলেন, “না, আমি এমন কোনো লোক নই এবং আমার এমন কোনো সুযোগও নেই।” তিনি আরও বলেন, তার কাজ হলো সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
তিনি উল্লেখ করেন, “গত এক বছরে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। এই আগস্টে আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বছর পূর্ণ হয়েছে এবং আমরা বহু অর্জন করেছি।” তার অন্যতম বড় সাফল্য পরিচিত করেছেন ঐকমত্য কমিশন গঠনকে, যা ১১টি সংস্কার কমিশনের ভিত্তিতে গঠিত। ঐকমত্য কমিশন এই মাসের শেষে নির্বাচন সম্পর্কিত সংস্কার প্রতিবেদন দেবে, যা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থা গঠনে সহায়ক হবে।
ড. ইউনূস বলেন, “আমরা এখন ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদনের দিকে এগোচ্ছি। সম্ভবত এই মাসের শেষের দিকে তা পাব।” ঐ কমিশনের প্রধান দায়িত্ব হলো রাজনীতিক স্পর্শকাতর বিষয়সহ নানা দিক নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐক্যমত গড়ে তোলা। তিনি উল্লেখ করেন, “রাজনীতির প্রশ্নে ঐকমত্য অপরিহার্য। সংসদ এককক্ষ বিশিষ্ট না দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট হবে—এই নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে।”
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, বাংলাদেশ এখন সঠিক পথে এগোচ্ছে এবং আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে সফল নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত। তিনি আরও বলেন, “এবারের নির্বাচন আগের তিনটি ‘মিথ্যা’ নির্বাচনের তুলনায় ভালো হবে। বহু বছর পর প্রথমবারের মতো জনগণ একটি সুষ্ঠু নির্বাচন পাবে। পূর্বের নির্বাচনে ভোট প্রদান অনেকাংশে ছিল শূন্য, মানুষ জানত না কী হয়েছিল।”
বিশেষ করে যারা এখন পর্যন্ত ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেননি, তাদের জন্য এবারের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।
এদিকে, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে সিঙ্গাপুরভিত্তিক চ্যানেলনিউজএশিয়াকে (সিএনএ) দেওয়া আরেক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে দেশের পুরনো সমস্যা পুনরায় ফিরে আসবে।
তিনি জানান, সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর নির্ধারিত লক্ষ্যগুলোর বেশির ভাগ অর্জনে তাঁরা কাছাকাছি পৌঁছেছেন। “নির্বাচন যদি গ্রহণযোগ্য না হয়, তবে তার কোনো অর্থ থাকে না। আমার কাজ হলো একটি সুষ্ঠু, পরিষ্কার এবং উৎসবমুখর নির্বাচন নিশ্চিত করা,” যোগ করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “আমরা প্রায় লক্ষ্যের কাছে পৌঁছেছি। রাজনীতির পূর্ববর্তী অবস্থা ছিল দুর্নীতি, অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগে ভরা, যেগুলো সংস্কার প্রয়োজন।”
রাজ্যের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আগস্টে শেখ হাসিনা প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে যান; তাঁর অনুপস্থিতিতে বিচার শুরু হয়। হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ ভারতের কাছে তাকে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করলেও দিল্লি সাড়া দেয়নি।
ড. ইউনূস জানান, ভারতকে জোর দিয়ে বলা হয়েছে যাতে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ অস্থিতিশীল করার সুযোগ না পান। “আমরা বলেছি, আপনারা তাকে রাখুন, আমাদের বিচার চলুক। তিনি যেন দেশকে অস্থিতিশীল করার সুযোগ না পান।”
শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ছিল ঘনিষ্ঠ, তবে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আঞ্চলিক কূটনীতির দিক থেকে ঢাকার অবস্থান কিছুটা বদলেছে। মার্চে তিনি বেইজিং সফর করে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন।
তিনি বলেন, “আমাদের পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রয়েছে। ভারতের সঙ্গেও আমরা ভালো সম্পর্ক চাই। এটা শুধু চীনের জন্য নয়, ভারত বা যে কেউই এই সুযোগ নিতে পারে।”
৮৫ বছর বয়সী বিপ্লবী নেতা ড. ইউনূস জানান, তিনি প্রথমে দায়িত্ব নিতে চাননি, তবে ছাত্রনেতা ও জনগণের আবেদনে রাজি হয়েছেন। নির্বাচনের পর রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
পরিশেষে তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ আর পথভ্রষ্ট হবে না। যুবসমাজ যেন ভোটের মাধ্যমে তাদের স্বপ্ন এবং প্রত্যাশার প্রকাশ করে এবং একটি উন্নত, গণতান্ত্রিক ও সময়োপযোগী সরকার নির্বাচিত হয়।