যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় মার্কিন সমর্থিত ত্রাণকেন্দ্রগুলোর বাইরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের নিয়মিতভাবে হত্যা করছে বলে শুক্রবার অভিযোগ উঠেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) থেকে। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, ক্ষুধাকেই যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
জেরুজালেম থেকে এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সংকট ও সংঘাত বিষয়ক সহপরিচালক বেলকিস উইল বলেন, “গাজায় মার্কিন সমর্থিত ইসরাইলি বাহিনী ও বেসরকারি ঠিকাদাররা একটি ত্রুটিপূর্ণ, সামরিক নিয়ন্ত্রিত ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থাকে চালু করেছে, যা সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার বদলে বারবার রক্তপাতের ঘটনায় পরিণত হচ্ছে।”
প্রায় ২২ মাস ধরে গাজায় ইসরাইলি বাহিনী ও হামাসের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বের কারণে জাতিসংঘ নিযুক্ত বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদন বলছে, এই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি, এবং অসংখ্য বেসামরিক মানুষ অনাহারে মৃত্যুবরণ করছেন।
ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামে একটি বেসরকারি ত্রাণ কর্মসূচিকে সমর্থন দিচ্ছে, যা গাজার চারটি কেন্দ্রে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব কেন্দ্রকে মার্কিন সামরিক ঠিকাদার ও ইসরাইলি সেনাবাহিনী নিরাপত্তা দিচ্ছে।
জিএইচএফ তাদের কার্যক্রম শুরু করে মে মাসের শেষ দিকে, যা দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন মানবিক সহায়তা ব্যবস্থাকে এড়িয়ে গিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। তখন ইসরাইল কয়েক মাসের খাদ্য ও অন্যান্য জরুরি পণ্যের অবরোধ কিছুটা শিথিল করে।
তবে এরপর থেকে গাজার ভিতরে এএফপি সংবাদদাতা, সিভিল ডিফেন্স সংস্থা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা একাধিকবার সেইসব ঘটনার কথা তুলে ধরেছেন, যেখানে সহায়তা পাওয়ার আশায় জিএইচএফ কেন্দ্রের কাছে জমায়েত হওয়া অসহায় ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ওপর ইসরাইলি সেনারা গুলি চালিয়েছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২৭ মে থেকে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে অন্তত ৮৫৯ জন ফিলিস্তিনি জিএইচএফ-এর ত্রাণকেন্দ্রের আশেপাশে খাদ্য সংগ্রহের সময় নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই ইসরাইলি সেনাবাহিনীর গোলাবর্ষণে প্রাণ হারিয়েছেন।
এইচআরডব্লিউ-এর বেলকিস উইল বলেন, “ইসরাইলি বাহিনী শুধুমাত্র ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ইচ্ছাকৃতভাবে অনাহারে রেখেই থেমে থাকছে না, তারা প্রায় প্রতিদিনই যখন এই মানুষগুলো তাদের পরিবারের জন্য খাবার সংগ্রহের চেষ্টা করছে তখন তাদের গুলিতে হত্যা করছে।”
এইচআরডব্লিউ-এর অভিযোগ সম্পর্কে এএফপির পক্ষ থেকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী তাত্ক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি। তবে পূর্বে তারা দাবি করেছে, তারা নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে না এবং দুর্ঘটনাজনিত হতাহতের সুযোগ কমানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে।
এই পরিস্থিতির মধ্যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ শুক্রবার গাজায় জিএইচএফ-এর অন্তত একটি খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র পরিদর্শনে যাচ্ছেন। এ সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে এই গভীর খাদ্য সংকট নিরসনের জন্য আন্তর্জাতিক চাপও বাড়ছে।