ঢাকা | রবিবার | ৩রা আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৯ই সফর, ১৪৪৭ হিজরি

যুদ্ধবিরতির আশা মধ্যেই থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে সংঘর্ষ অব্যাহত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপের পর যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা তৈরি হলেও থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ নতুন করে চতুর্থ দিনে প্রবলভাবে চলছে। বিতর্কিত এই সীমান্ত এলাকা নিয়ে প্রায় শ’ বছরের মামলায় যে সহিংসতা শুরু, তাতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৩ জন নিহত এবং দুই লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

কম্বোডিয়ার সামরুং থেকে এএফপি জানায়, শনিবার গভীর রাতে ট্রাম্প দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে দীর্ঘ আলোচনা করেন। এরপর উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতি নিয়ে দ্রুত আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়। কিন্তু রোববার সকালে ফের থাইল্যান্ডের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত ও কম্বোডিয়ার উত্তরাঞ্চলের বিতর্কিত দুই প্রাচীন মন্দিরের আশপাশে গোলাগুলি শুরু হয়।

কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মালি সোচেতা জানিয়েছেন, ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে থাই সেনারা মন্দির সংলগ্ন এলাকায় হামলা চালায়। এএফপি’র সাংবাদিকরা জানান, সামরুং শহরের ভবনগুলো কামানের গোলার শব্দে প্রায় কেঁপে ওঠে। থাই সেনাবাহিনীর উপ-মুখপাত্র রিচা সুকসুয়ানন বলেন, কম্বোডিয়ান বাহিনী ভোর ৪টার দিকে আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গোলা বর্ষণ শুরু করে। দুই পক্ষই কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে তীব্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

রোববার কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত জানান, তার দেশ ‘তাৎক্ষণিক ও শর্তহীন যুদ্ধবিরতির’ প্রস্তাবে সম্মত। একই সঙ্গে তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রাক সোখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। তবে তিনি থাইল্যান্ডকে কোনো চুক্তি লঙ্ঘন না করার বিষয়ে সতর্ক করেছেন।

থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই ট্রাম্পের হস্তক্ষেপের পর জানান, নীতিগতভাবে তাদের দেশ যুদ্ধবিরতিতে যেতে রাজি এবং দ্রুত আলোচনায় বসতে চায়। তবে তিনি কম্বোডিয়াকে শান্তির জন্য সত্যিকারের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা দেখানোর আহ্বান জানান।

পুরোনো সীমান্ত বিরোধ থেকেই এই সংঘর্ষের সূত্রপাত। পাহাড়ি ও জঙ্গলে ঘেরা গ্রামীণ এলাকার মানুষ প্রধানত রাবার ও ধান চাষ করে। বর্তমানে সেখানে বিমান, ট্যাংক ও স্থলসেনা মোতায়েন রয়েছে।

থাই কর্তৃপক্ষ জানায়, সংঘর্ষে তাদের সাত সেনা ও ১৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। একই সঙ্গে কম্বোডিয়া জানিয়েছে আট বেসামরিক ব্যক্তি এবং পাঁচ সেনা সদস্য প্রাণ হারিয়েছে। থাইল্যান্ডের সীমান্ত থেকে ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ এবং কম্বোডিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৮০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূত চিয়া কেও জানিয়েছেন, তার দেশ দ্রুত যুদ্ধবিরতি ও চূড়ান্ত শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শনিবার দুই দেশকে যুদ্ধবিরতি স্বীকার করে স্থায়ী সমাধানে আলোচনা শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘ মহাসচিবের উপ-মুখপাত্র ফারহান হক জানান, সংঘর্ষে প্রাণহানি, বেসামরিক ক্ষতি ও অবকাঠামোর ধ্বংসে মহাসচিব গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

অন্যদিকে, দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে প্রথমেই গোলাগুলি শুরু করার অভিযোগ এনেছে। কম্বোডিয়া বলেছে, থাই বাহিনী ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করেছে। থাইল্যান্ডের দাবি, কম্বোডিয়ান বাহিনী বেসামরিক স্থাপনাগুলোকে টার্গেট করেছে, এমনকি একটি হাসপাতালও কামানের গোলায় আঘাত পেয়েছে।

এই ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত এলাকায় বহুদিন ধরেই বিরোধ চলমান। সাম্প্রতিক সংঘর্ষে সেই বিরোধ আরও তীব্র আকার নিয়েছে এবং এখনও বেশ কিছু এলাকাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে মতপার্থক্য বজায় রয়েছে।