গাজায় একের পর এক ফিলিস্তিনি অনাহারে মারা যাওয়ার পর বিশ্ববাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ইসরায়েল অবশেষে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। মিসর থেকে গাজার উদ্দেশে ত্রাণবাহী ট্রাক রওনা দিয়েছে বলে জানানো হয়েছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ব আল কাহেরা নিউজ টিভির মাধ্যমে।
স্থানীয় সময় শনিবার (২৬ জুলাই) ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় ত্রাণ প্রবেশের পাশাপাশি আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলার কার্যক্রমও শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। চলমান দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে তারা জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছেন, মানবিক পরিস্থিতির অবনতি মোকাবিলায় তারা তিনটি এলাকায় সামরিক অভিযান ‘কৌশলগত বিরতি’ ঘোষণা করেছে। রবিবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মুওয়াসি, দেইর আল-বালাহ এবং গাজা শহরে সামরিক কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। যদিও বর্তমানে ওই এলাকায় তীব্র অভিযান চলমান রয়েছে না।
তারা আরও জানিয়েছে, ত্রাণ সংস্থাগুলোর খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা নিরাপদে পৌঁছে দিতে নিরাপদ রুট নির্ধারণ করবে। একই সময়ে মিসর ও গাজার মাঝে অবস্থিত রাফাহ সীমান্ত ও দক্ষিণ গাজার কারাম আবু সালেম ক্রসিং থেকে শত শত টন ত্রাণসামগ্রী গাজায় নিয়ে আসা হচ্ছে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বিতর্কিত এয়ারড্রপ কার্যক্রমও শুরু করেছে, যেখানে বিদেশি সহযোগিতায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ময়দা, চিনি ও টিনজাত খাদ্যাদির মত সামগ্রী বিতরণ করা হবে। তবে মানবিক সংস্থাগুলো মনে করে এই এয়ারড্রপ মানবিক সহায়তার প্রতীকী উদ্যোগ মাত্র এবং এটি স্থলপথের ত্রাণ সরবরাহের বিকল্প হতে পারে না।
ইসরায়েলি পক্ষ এও ঘোষণা দিয়েছে যে তারা গাজায় একটি পানি পরিশোধন প্লান্টের সম্প্রসারণে সহায়তা করবে এবং সেটিকে তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত করবে, যদিও গত বছর ধরে চলমান অভিযানে গাজার অধিকাংশ পানি ও বিদ্যুৎ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে, গাজায় ত্রাণবাহী জাহাজ নিয়ে যাত্রার সময় ফ্রান্সের একজন ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য এমা ফোরো জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী তাদের জাহাজের কাছে এসে বাধা দিয়েছে এবং তারা নিজেরা মোবাইল ফোন সাগরে ফেলে দেওয়ার পরীক্ষা করছেন।
ত্রাণ প্রবেশের এই সিদ্ধান্তকে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গাভির, যিনি এটিকে ‘হামাসের কাছে আত্মসমর্পণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
গত মার্চ মাসে ইসরায়েল গাজায় জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার ত্রাণ প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেয়, যার ফলে প্রায় ২০ লাখ গাজাবাসী চরম খাদ্য সংকটে পড়েন। বহু বিশেষজ্ঞ আগে থেকেই এখানে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করছিলেন। বিশেষ করে হামাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এসব সংস্থার ত্রাণ ঢোকানোয় ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা ছিল।
চলতি বছরের মে মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে গাজায় ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন’ চালু হয়েছে, তবে তাদের সরবরাহ করা ত্রাণ খুবই কম। ফলে গাজায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। মিডল ইস্ট আই নিউজ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ১২৭ জন অনাহারে প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে অন্তত ৮৫ জন শিশু। মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাঁচ ফিলিস্তিনি, যার মধ্যে দুই শিশু, অনাহারে মৃত্যু বরণ করেছে বলে আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন।