ঢাকা | সোমবার | ৪ঠা আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১০ই সফর, ১৪৪৭ হিজরি

গাজায় অনাহারে প্রাণহানির আশঙ্কায় ১ লাখের বেশি শিশু

ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজা উপত্যকায় খাবারের সংকট ক্রমশ উদ্বেগজনক আকার ধারণ করেছে। এখানে দুই বছরের কম বয়সি এক লাখের বেশি শিশু অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণহানির ঝুঁকিতে রয়েছে। এই বিরূপ পরিস্থিতির মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার কিছু এলাকায় প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা করে হামলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গত ১১ সপ্তাহ ধরে চলমান অবরোধে গাজায় ত্রাণের প্রবেশ সীমিত থাকায় মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। মে মাসের শেষ দিক থেকে ইসরায়েল সামান্য পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশ করতে অনুমতি দিলেও, ত্রাণ সংগ্রহে যাওয়ার সময় ফিলিস্তিনিরা প্রাণহানির শিকার হচ্ছেন। জাতিসংঘের তথ্য বলছে, গাজার প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে খাদ্য সংকটে ভুগছেন।

এক্ষেত্রে সবচেয়ে দুর্বল জনগোষ্ঠী হচ্ছে শিশুরা। গাজার জনসংযোগ কার্যালয় জানায়, ফর্মুলা দুধের অভাবে দুই বছরের কম বয়সি এক লাখেরও বেশি শিশু মৃত্যুর মুখোমুখি। এর মধ্যে ৪০ হাজার শিশু এক বছরের কম বয়সী। মায়েরা তাদের জন্য ফর্মুলা দুধের অভাবে শুধুমাত্র পানি খাওয়াচ্ছেন, যা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

গাজার মা-শিশুরাও চরম দুর্দশায় আছেন। অনেক মায়েরা অপুষ্টির কারণে নিজ সন্তানকে বুকের দুধ পুষ্টিকরভাবে দিতে পারছেন না। এর মধ্যে জয়নব নামের এক মা জানান, ‘‘এই অনাহারের মধ্যে আমি অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম। সন্তান জন্ম দেওয়ার সময়ও শরীর দূর্ধষ ছিল না। গত ৯ মাসে হয়তো একটি ডিম ও খাইনি। কী বলব জানি না।’’

খাদ্য সংকটের জেরে গত রোববার গাজায় অন্তত পাঁচ ফিলিস্তিনি অনাহারে মারা গেছেন, তাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যে, গত মার্চ থেকে অবরোধ শুরু হওয়ার পর অনাহার ও অপুষ্টিতে মোট ১২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৮৫ জনের বেশি শিশু। আরও উল্লেখযোগ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে গাজায় প্রায় ৬০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

রাষ্ট্রসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন গাজার দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। সম্প্রতি শতাধিক মানবাধিকার সংস্থা ‘ব্যাপক দুর্ভিক্ষ’ ছড়িয়ে পড়ার সতর্কতা দিয়েছে। গত শুক্রবার যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি গাজায় এই বিপর্যয় থামানোর জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

আন্তর্জাতিক চাপের ফলে আজ ইসরায়েল ঘোষণা দিয়েছে, গাজার আল মাওয়াসি, দেইর আল-বালাহ ও গাজা নগরীতে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ‘কৌশলগত সামরিক কর্মকাণ্ড’ বন্ধ থাকবে। এই সময় জাতিসংঘ ও ত্রাণসংস্থাগুলো সড়ক পথে নিরাপদে ত্রাণ বিতরণ করতে পারবে।

সন্ধ্যায় ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলার কথা জানিয়েছে। তবে উত্তর গাজার একটি ত্রাণ বাক্স একটি তাঁবুর ওপর পড়ে অন্তত ১১ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে। অন্যদিকে, মিসরের রাফা ক্রসিং হতে গাজার মধ্যে ত্রাণের ট্রাক প্রবেশ শুরু করেছে বলে দেশটির সরকারি সংবাদমাধ্যম আল-কাহেরা নিউজ জানায়।

একই সময়ে আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) জাহাজ ‘হান্দালা’ গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার পথে ইসরায়েলি বাহিনী তাকে আটক করেছে এবং জাহাজের আরোহীদের অপহরণ করেছে বলে সংস্থাটি দাবি করেছে। জাহাজটি গাজা উপকূল থেকে প্রায় ৪৭ কিলোমিটার দূরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ছিল।

গাজার সংকট ও দুর্দশার এই অন্ধকারে আন্তর্জাতিক সহায়তা ও মানবিক তত্পরতা একান্ত প্রয়োজন, যা যেন দ্রুত পৌঁছে মানুষ ও শিশুদের প্রাণ রক্ষা করতে পারে।